Amazon

সোমবার, ২৬ মে, ২০১৪

আমার দার্জিলিং ভ্রমণ

একটু ক্ষমা করে নেবেন যদি বানান ভুল হয তো। আসলে আমি একজন হুজুগে লোক । হটাত্‍ হটাত্‍ প্ল্যান করে বেরিয়ে পরি । সেরকম ই হটাত্‍ প্ল্যান করলাম চল দার্জিলিং যাব। শুধু মাত্র 1 মাসের প্ল্যান এ বেরিয়ে পরা মানে বুঝতেই পারছেন train এ ticket নেই। তো কী র করা । বাস এই ফেরা ঠিক করলাম। আর সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য বশতঃ HWH-NJP এসি এক্সপ্রেস ট্রেন টায় কিছু সীটিং তখন পড়ে ছিল। সেটাই চটপট কেটে নিলুম যাওয়ার জন্য। আমার সহযাত্রী আমার wife মেয়ে, শ্যালিকা ও তার পরিবার, আমার শাশুড়ি। আমরা দী - পু- দা তে অভস্ত হলেও আমার দার্জিলিং টা ছোট বেলার পর র যাওয়া হয় নি কখনো।  তাই আমার মেয়ের kanchonjoghya দেখার আনন্দ টা আমার আনন্দের সঙ্গে মিশে যেন একটা নতুন খুশির পাহাড় তৈরি হয়েছে সবার মনের মধ্যে। দেখতে দেখতে দিন চলে এল । May মাসের শেষের দিকে। এই বছরেই । চলো সবাই রেডি স্টেডি Go।
এর মাঝে আমি গাড়ি ভাড়া করে নিয়েছিলাম ইন্টারনেট এ । তাই নিশ্চিত ছিলাম কেউ না কেউ নিশ্চয় NJP তে আমার জন্য কিছু একটা গাড়ি নিয়ে আসবে।

তো যাত্রা শুরু করতে চলে গেলাম হাওড়া স্টেশন এ। ট্রেন ও দিল প্রায় আধ ঘণ্টা আগে। কিন্তু দরজা আর খোলে না । দু একটি কামরার দরজা খোলা ছিল। তার একটি দিয়ে আমি অনেক কষ্টে ঢুকে বাকি দের দরজা খুলে ঢুকিয়ে নিলাম। এর পর তো র এক হাপা। এত ভিড় যে মালপত্র রাখার জয়গা নেই। কষ্টে শিষ্ঠে একটু জয়গা করে আর বাকি টা সীট এর নিচে ঢুকিয়ে সবাই বসলাম । কিছুখনেই ভুল ভাঙ্গল। এই সীটের কোনও পেছনে নেবার বাবস্থা নেই। একদম সোজা বসে থাকতে হবে সারা রাত। এই রকম ট্রেন ও আমাদের জন্য রেখেছে তাহলে ইন্ডিয়ান রেল ? মেয়েটার জন্য কষ্ট হল। কী র করা ।  শেষ রাতের দিকে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল । একমাত্র আমি ফরাক্কা টা দেখতে পেলাম। এর পর শুরু হল ধৈর্য পরীক্ষা। Kisanganj থেকে র ট্রেন নরেই না। এর মধ্যে তিন বার আমার গাড়ির চালক প্রাণেশ আমাকে জানিয়ে দিয়েছে যে সে এনজেপি তে দাড়িয়ে আছে। যত বার তার ফোনে আসে ততবার মনে হয় এই তো পাহাড় থেকে আমন্ত্রন এসেছে। মাঝে মধেই মনে হচ্ছিল ট্রেন থেকে নেমে দৌড়ে চলে যাই। 3 ঘণ্টা লেট এ অবশেষ এ NJP।  

এনজেপি নামার পরেই শুরু হল অঝোর বৃষ্টি । অনেক কষ্টে ভিজে ভিজে সামনে এলাম। প্রাণেশ একদম গেট এর সামনেই গাড়িটা রাখায় উঠে পড়তে খুব একটা কষ্ট হল না কারো। প্রাণেশ কে অনুরোধ করায ও একটি সুন্দর ছোট হোটেল এ আমাদের মধ্যন্ন ভোজন করাল। আবার শুরু হল চড়াই। 3 ঘন্টার মধ্যে পৌরচে গেলাম দার্জিলিং গেস্ট হাউসে। ছোট বেলার কিছু স্মৃতি সঙ্গে মেলাতে পরলুম শুধু দার্জিলিং এর কু ঝিক ঝিক টয় ট্রেন আর ঘুম কে। এবার শুরু আর এক প্রস্থ অবাক হবার পালা। আমাদের হোটেল এর নাম ছিল এমএম লজ। ওটা দার্জিলিং গেস্ট হাউসে এর ঠিক নিচে। আমরা আগেই বূক করেছিলাম কলকাতা থেকে। প্রাণেশ ব্যাগ পত্র সহ খুঁজে বার করল হোটেল টা এজক্তা নোঙ্গরা ঘুপচির মধ্যে। একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক পড়ে জেনেছিলাম তার নাম তাপস সিংহ, হাতে মোমবাতি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর একজন কম বয়েসি ম্যানেজার যার নাম সৌরভ মুখার্জী , অনেক কিছু manage করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই করতে পড়ছে না। কলকাতা অফিস এর দয়াতে তার কাছে কোনও ঠিক তথ্য ও নেই যে কজন কবে checkin করবে বা কত রুম প্রয়োজন। আমাদের দেখে সৌরভ বাবু অনেক কষ্টে কিছু লোক জনকে তাড়িয়ে দুটো রুম এর বাবস্থা করে তো দিলেন , কিন্তু জল নেই, আলো নেই, খাবার নেই । কিছুই নেই। বিরক্তিকর বাথরূম টা কোনও রকমে পরিষ্কার করে থাকার বাবস্থা তহ করে দিলেন সৌরভ বাবু ও তাপস বাবু। কিন্তু খাব কী?  হোটেল এর তলায় resturant থাকার কথা বললেও আসলে সেটা একটা রান্নাঘর মত। সৌরভ বাবুদের হাতে কোনও বাবস্থা ও নেই যে তিনি খাবার বাবস্থা করবেন। অনেক চেষ্টা করার পর ওপরে একটা হোটেল এ খাবার বাবস্থা করে তবে আমি ফ্রেশ হতে এলাম ঘরে।

ঘরে ঢুকে দেখছি আমার বউ মোটামুটি ঘরটা থাকার মত করে ফেলেছে। র আমার চোখ গেল বাইরে। একি দৃশ্য দেখছি আমি ? ছোট বেলার স্মৃতি সঙ্গে এ দেখা তো কোনও মিল নেই। যার জন্য এত কষ্ট করে আসা সে তো একদম সামনে । আমি আর আমার মেয়ে শুধু তাকিয়ে আছি। সূর্য হেলে পড়েছে। তুষারশুভ্র কাঞ্চন তখন যেন এক মায়াবী। এক পলকে যত টা গেলা যাই গিলে ফেললাম। আসলে তহ তার এই রূপ কিছুক্ষণের জন্য ও শুধু মাত্র আমার জন্য সেটা পরের দিন বুঝলাম।

একটু ক্লান্ত থাকায় তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছিলাম সবাই। পরদিন আমার বউ এর ডাকে ঘুম ভাঙলো। তখন বোধয় 4:45 হবে ঘড়িতে। আলো ফুটবে ফুটবে করছে। সূর্য়ের প্রথম কিরণ পড়েছে কাঞ্চন এর মাথায়। বুঝলাম মায়াবী ও সুন্দর কী আসলে কী হতে পারে । কত সুন্দর আপনার মনে হতে পারে পাঠক? এ তো তার থেকেও সুন্দর । সারা জীবনের  কষ্ট গুলো যেন এক নিমিশে শুষে নিল। ক্যামেরা বার করে যত টা সম্ভব ভবিষ্যতের জন্য ধরে রাখলাম। এই দৃশ্য আমার বউ দেখতে পায় নি। আগের রাতের ক্লান্তি ওকে ঘুম পারিয়ে রেখেছিল। মেয়ে খানিকটা দেখেছিলো। মাত্র 4 ঘণ্টা কাঞ্চন আমাদের দেখা দিয়েছিলো। এই 4 ঘণ্টা আমি মিরিক যাবার তাড়া কে পেছনে ফেলে পৃথিবী টাকে উপভ্যগ করেছিলাম। পাঠক এর পড়ে আর কাঞ্চন আমাদের দেখা দেয় নি বাকি দিন গুলো তে।

দার্জিলিং ভ্রমণের পরবর্তি ভাগ পার্ট -2: তো আমরা ওই কাঞ্চন এর মোহময় রূপ দেখে তাপস দা র সাহায্যে ছোট ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়ে পড়লাম মিরিক এ। অনেকে বলেন মিরিক এনজেপি থেকে আসার সময় ঘুরে আসা যায়। কিন্তু আমরা বড্ড ক্লান্ত থাকায় পরের দিন মিরিক যাব ঠিক করেছিলাম। প্রাণেশ ঠিক সময় মত 9 টার সময় এসে গেল র আমরা চেপে গেলাম তার গাড়িতে । darjeelingtaxi।com এর গাড়ি , খুব আরাম দায়ক। কিন্তু কেন জানি না ছোট breakfast টা সবার পেট থেকে কখন উড়ে গেছে। তাই আবার ওকে অনুরোধ করলুম চল কোনও একটা খাবার দোকান দেখে গাড়ি দার করাও। ও একটা খুব সুন্দর হোটেল এর সামনে গাড়ি দার করাল। পেট পুড়ে সবাই লুচি সবজি মোমো খেয়ে ফেললাম । অপূর্ব মোমো। কোথায় লাগে Kimley মোমো। এত যেন অমৃত খাছি। খাবার পর আবার গাড়ি চলল মিরিক এর দিকে। অজস্র নাম না জানা ও নাম জানা গাছের মাঝে চলতে লাগলুম। মাঝে হটাত্‍ আমার শ্যালিকা র ওর তার পুরো পরিবারের বমি পেতে লাগলো। অন্তত 3 বার গাড়ি দার করতে হল। এর মধ্যে একবার আমি নেমেছিলাম। কিছু প্রয়োজনীয় প্রাকর্তিক কাজ করতে। এখানে আমি হটাত্‍ দেখলাম একটা বড় জন্তু । আমি ঠিক বুঝতে পারি নি। মনে হল কাল চিতা বা black panther। র একটা জন্তুর ও আওয়াজ পছিলাম। আমি জলদি গাড়ি তে উঠে গেলাম। পাঠক, ওটি কিন্তু black panther ই ছিল। প্রাণেশ এর কথা মত এখানে black panther অনেক ঘুরে বেড়ায়। জায়গাটা লেপচা জগত এর পড়ে। ভাবুন পাঠক, আপনার ঠিক 100 মিটার দূরে নিচে একটা black panther। । তো আমি জলদি প্রয়োজনীয় কাজ করেই গাড়িতে উঠেই ছুট ওখান থেকে। কিছু ক্ষনের মধ্যে চা বাগান পেরিয়ে মিরিক। car parking থেকে আমি কৌশিকী, আমার শাশুড়ি ওর মেয়ে তিয়াস চললুম লেক দেখতে। প্রতিদিন যেন নতুন নতুন উপহার আমার জন্য সাজিয়ে রাখছে হিমালয় । এত মেঘ বৃষ্টির এক অপূর্ব খেলা। এই পুরো মেঘ এ ঢেকে যাচ্ছে পুরো লেক টা । আবার কিছুখনেই সম্পুর্ন নতুন রূপে উদভাসিত। মুগ্ধ হয়ে দেখার জন্য বোধয় র ও কিছু দিন ওখানে থাকতে হতো। কী করবো। কিছু ছবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ফেরার জন্য। ছবি গুচ্ছ এখানে দেব পাঠক গন। ফেরার পথে লেপচা জগত এ কিছু খন দাঁরিয়েছিলাম। নেপাল ঢোকা হয় নি । সবার শরীর খারাপ থাকায় তাড়াতাড়িই ফিরতে হয়েছিল হোটেল এ। হোটেল এ ফিরে আবার সেই অন্য হোটেল এ খাবার বাবস্থা করে দিয়েছিলেন সৌরভ বাবু। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে নতুন র একটি ঘর এদিন দিয়েছিলেন যা র ও ভাল ও ছিল। তাপস বাবু ও সৌরভ না থাকলে হয় তো আমাকে second দিন ই শিলিগুড়ি নেমে আস্তে হতো। আমি কিছু ছবি পোস্ট করলাম যাতে আমার শাশুড়ি কৌশিকী ও তিয়াশা আছে। সঙ্গে একটি ফটো তে আমার শ্যালিকা র মেয়ে ও আছে। যদি মনে হয় অবজেক্ট নয় আমি পরে উড়িয়ে দেব । আসলে এরা ছাড়া গল্প টাই তার চলন হারাবে [চলবে]

তৃতীয় ভাগ দার্জিলিং ভ্রমণ: মিরিক থেকে ফিরে হোটেল এ এক ভদ্রলোক এর সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনিও আমার মতই যখন তখন বেরিয়ে পড়েন। তিনি মাঝ বয়েশি ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার । নাম বিশ্বজিত্‍ গোস্বামী। তার অনুরোধে আমি ঠিক করলুম ওনাদের 4 জন কে পরের দিন ভোর বেলা টাইগার হিল এ আমাদের গাড়ি তে নিয়ে যাব। কৌশিকী ওর কৌস্তুরী (আমার শ্যালিকা) আগেই ডিক্লেয়র করে দেয় যে তারা অত ভরে উঠত্তে পারবে না। আমাদের মেয়েরাও যাবে না । সেই মত পরের দিন ভোর 3:30 (ঠিক ভোর নয়, মাঝরাত ) এ হোটেল এর সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি তহ দাড়িয়ে আছি। প্রণেশ এর র দেখা নেই। ধৈর্যের চুড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে ও খান দশেক ফোনে করার পর প্রায় 4:10 নাগাত তার গাড়ির দেখা মিলল। এই প্রথম আমি একটু ক্ষুণ্ণ হলাম প্রাণেশ এর ওপরে । নতুন 4 জন কে দেখে ওর প্রথম আপত্তি । যাইহোক বুঝিয়ে সুজিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। পাঠক গণ,  এর মধে বলে রাখী দার্জিলিং থেকে যত তাড়াতাড়ি আপনি টাইগার হিল এ উঠত্তে পারবেন তত ওপরে আপনার গাড়ি পৌছবে । নাহলে অনেক নিচে থেকে আপনাকে হেটে ওপরে উঠত্তে হবে। কারণ গাড়ি গুলো পর পর নিচের দিকে দাড়িয়ে যেতে শুরু করে। আমার যাত্রা শুরুর সময় দেখে আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম যে আমাদের বেস খানিকটা পথ হেটে উঠতে হবে। যথারীতি প্রায় 2 km নিচে গাড়ি থেমে গেল। বেস লম্বা সরপিল লাইন। অনেক ও অনেক দূরে টাইগার হিল এর চূড়া। পাঠক গণ টাইগার হিল এর চূড়ায় সুন্দর watch tower আছে, যেখানে আপনি সুন্দর সূর্য় উদয় দেখতে ও সৃতির মনিকোঠায় চিরন্তন ছবি আঁকতে পারবেন। গাড়ি থেকে নেমে তো একদম মন খারাপ। সূর্য ওঠার সময় প্রায় হয়ে গেছে । অথচ অনেক অনেক দূরে চূড়া।  হটাত্‍ দেখলাম আসে পাশে লোকজন জন কোথায় উঠে চলেছে। খাজে খাজে ভর করে একটু কষ্টের সঙ্গে হেটে হেটে লোক জন বেস কিছু পরশবরতী অঞ্চল এ উঠে পড়ছে। একজন স্থানীয ভূটিয়া আমাকে বললেন এদিকে একটা ছোট কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম উঁচু পথ দিয়ে উঠে যেতে।  সেই মত পাহাড়ে ধাপ গুলো তে প দিয়ে দিয়ে উঠে পড়লাম একটা ছোট চূড়ায়। টাইগার হিল এর চূড়ায় ওঠা আপাতত পরের বারের জন্য রেখে এলাম। উঠে দেখি সে কী ভিড়। পাঠক, bongaon লোকাল এর ভিড় এর কাছে অনেক সুশৃঙ্খল। সূর্য দেখার তারা তে ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে সামনের লোককে। কী বিপদ। খাদে পড়ে যেতে পারি তো। হটাত্‍ আমার সহযাত্রী ও শাশুড়ি মাতা খেয়াল করলেন যে ওর থেকে একটু কঠিন পথে র ও 10 ফুট ওপরে একটা ছোট চূড়ায় একদম কম ভিড়। উঠতে হবে sinkona গাছের ডাল ধরে। sinkona গাছ ই বোধই লোকাল দের কোথায়। কিন্তু অদ্ভুত তার শক্তি। দেখলে বাড়ির পাশের একটা ফুল গাছের মতন মনে হলেও তার ডাল ধরে আমি উঠে গেলাম ওই জায়গাও। তাহলে বুঝতেই পারছেন কত ক্ষমতা । উঠতে দেখি হালকা কুয়াসা ঢাকা মেঘের কোলে লাল সূর্য় সবে তৈরি হচ্ছেন। হিমালয় বোধই এই উপহার এর ডালির সব থেকে সুন্দর উপহার টা আজকে আমাকে আংশিক ভাবে দেখতে দেবে। কিন্তু না, হিমালয় আমার সঙ্গে কৌতুক করছিল। ঠিক 1-2 মিনিট পরেই কুয়াসা কে সরিয়ে হালকা মেঘ দৈত্য কে সঙ্গে নিয়ে উঠে পড়লেন সূর্য় দেবতা।কোনও একজন অভিনেতা যেন আমাদের সামনে এলেন। চারিদিকে হই চৈ। কুয়াসা সরে যেতে একটু একটু করে কাঞ্চন ও দেখা দিতে চেষ্টা করল । কিন্তু আমি আগেই বলেছি কাঞ্চন একবারই আমাকে অত রূপের ঢালী নিয়ে দেখা দিয়েছিলো। এবার একটু যেন পরদাসিন থেকেই গেল। ছবিও তুলতে দিল না ভাল করে। ভাবনাটা অনেকটা এরকম যে একসাথে দুজন কে তুমি পাবে না। মাকলু ও র ও কিছু নাম না জানা পর্বত ভেসে ভেসে এল ও চলেও গেল। কিছুখন থেকে সেই দৃশ্য গুলো মনের অন্দরে রেখে নেমে এলাম।
নেমে আসা মানে কিন্তু গাড়ি চালু হয়ে যাও নয়। আপনাকে দাড়িয়ে থাকতে হবে এবার পড়ে আসা গাড়ি গুলো চালু হওয়া অবধি। এর মধে 2 কাপ অপূর্ব স্থানীয চা পান করলাম।  প্রায় 1 ঘণ্টা দাড়িয়ে থেকে তবে গাড়ি নিচের দিকে নাম শুরু করল। এর মদ্ধে প্রাণেশ র একবার জন্যে দিয়েছে যে সে অন্য লোক নেবে না । অগত্যা 300 টাকা তার হাতে ধরাতে শান্ত হল। তাহলে এখানেও টাকা কথা বলে। নেমে আসার সময় বাতাসিয়া লুপ এ দারালাম। এখানে এত ভিড় যে আমি জয়গাটা পছন্দ করলাম না। একসঙ্গে জয় রাইড এর লোকজন ও গাড়িতে টাইগার হিল এর ফেরত লোকজনের কোলাহল যেন জয়গাটা নষ্ট করে দিয়েছে। টেলিস্কোপ দিয়ে লোথসে ও র ও কিছু পাহাড় দেখলাম বটে কিন্তু পছন্দ হল না। বোধই দুরথেকেই এর সুন্দর। হোটেলে জলদি ফেরার তারা ছিল। কারণ খিদে ও পেয়েছিল। সঙ্গে আবার ওইদিন ই স্থানীয ভ্রমণ এর ও তারা ছিল। জলদি ফিরে এলাম। স্নান করে পেটে কিছু ফেলে চললাম দিনের শেষ ভাগের ভ্রমণ এর জন্য। 10 টা নাগদ এবার পুরো দল বেরিয়ে পড়লাম।  প্রথম গন্তব্য চিড়িয়াখানা। আগের দিনের black panthar দেখলাম এখানেও উপস্থিত । তবে কস্ট হল। বেচারা দের যেন স্বাধীনতা হরণ করে পইসা রোজগার করা show piss করে রাখা হয়েছে। বাঘ মামা থেকে শুরু করে ভালুক বাবু ও কালো চিতা অতিক্রম করে পৌছলম বক বক করা পাখিদের সামনে। এদের ঝগড়া দেখে তহ মাথায় হাত। এর মদ্ধে আমরা হটাত্‍ নেপালী সেজে গেলাম ফটো তোলার জন্য। ফটো তোলা হল আবার সেই ফটো নিয়ে অনেক মন্তব্য হজম করলাম। চিড়িয়াখানা দেখা শেষ হতেই চলো ছোটো। এবার সোজা tibetan refugee center। চা বাগান থেকে এই জয়গাই ওঠার রাস্তা টা পাঠকগন কখনো গাড়ির পেছনে তাকাবেন না। বিশেষ করে যদি গাড়ি পেছনে নিতে হই তো। কারণ হই তো আপনার গাড়ি র মাত্র 2 ইঞ্চ খাদের সামনে দাড়িয়ে আছে। যাই হক ওপর থেকে নিচে তাকালে কিন্তু মনটা ভরে ওঠে। একটু দাঁড়াবার জায়গা পেলে হয় তো আপনাদের ও একবার দেখিয়ে আনতে পারতাম।  শুধু মনে করুন আপনার সামনে ডাল বেয়ে নেমে চলেছে গোছ গোছ চা এর সারি। আহা। আবার কবে যে আসব। tibetan এ খুব অল্প সময় কাটিয়ে নেমে এলাম চা বাগানে। tibetan center নিয়ে কিছু লিখব না। রাজনৈতিক হতে পারে। শুধু একটা কথায় বলি যে এদের করমখমতা আমরা কেউ কোনও দিন কল্পনাও করতে পারব না । ছোটো ছোটো শিশু দের যেভাবে হত্যা করার ছবি দেখলাম আমার মন খারাপ হয়ে গেল।

এবার চলুন চা বাগানে। বাগানের ওপরে বসে চা খাও আর  চা কেন। এটা সম্পুর্ন করে "আমাকে বাঁচতে দাও" (চা বাগানে লেখা একটি বোর্ড) এর আর্তনাদ সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়লাম।  বেস খানিকটা নীচেই নেমেছিলম। একদম সোজা পথ নয়। একটু বেশি চড়াই। তাও নেমে গেলাম বেস কিছু টা নিচে। না, কোনও চা পাতা তুলি নি। তুলতে দি ও নি। শুধু কিছু ছবি তুলে রাখলাম। একটু কষ্ট করেই ওপরে উঠে এলাম। প্রচণ্ড খিদে টে, লোকাল মোমো কিনলাম। পাঠক আপনি দার্জিলিং এর যেকোনো দোকান থেকে (obossoi লামদের দোকান হতে হবে)মোমো কিনুন ও খান। এর স্বাদ বছর বছর মনে থাকবে।

এবার গন্তব্য Tenjing রক। এখানেই নাকি Tenjing Norgey পাহাড়ে ওঠা অনুশীলন করতেন। একটি আপাত নিরীহ ছোটো পাহাড়ে অনেক দড়ি খাটানো। ভালই লাগলো। উঠিনি। মধ্যাণ্য ভোজন এর তারা ছিল। অনেক গরিঘোরা ঠেলে অবশেষ এ পৌছলাম মল।  দার্জিলিং এর প্রাণ কেন্দ্র।  নিচের দিকের ভূটিয়া মার্কেট এ আপনি পেয়ে যাবেন সস্তায় ভাল ভাল গরম জামা। আবার বড় বড় দোকান ও আছে। একটু এগলে পাবেন বিগ বাজার। আমি কিন্তু ভূটিয়া মার্কেট থেকেই কিনলাম। অনেক কিছু কিনলাম।  সোএটার থেকে শুরু করে মজা পর্যন্ত।  বেস সস্তায়। একটু দাম করবেন।

মধ্যান্ন ভোজন এর পর কেন কাটা করে নিস্য পকেট নিয়ে একটি গাড়ি ভাড়া করে চলে এলাম সৌরভ বাবুর অস্থানায়। সুখবর। রাতের খাবার সৌরভ বাবু বাবস্থা করছেন। ঘরে গিয়ে হাত প ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এর মদ্ধে আবার দুসংবাদ।আবার কলকাতা অফিস এর সৌজন্যে সৌরভ বাবু আমাদের খাবার বাবস্থা করতে পারবেন না, বুঝুন দেখি। অন্য হোটেল এ খাব না বলে দিয়েছি। কী করব? হাতে পায়ে ধরতে বাকি। বিশ্বজিত্‍ বাবু ও আমি চললাম রান্না করতে । একজন রাধুনি নিয়ে অনেক জন border কে নিয়ে বেসামাল অবস্থা তখন সৌরভ বাবুর। তো আমি আর র ও তিন চারজন মিলে নিচের রান্না ঘরে রাধুনির সঙ্গে হাত মিলিয়ে খাবার বাবস্থা করলাম। বেস রাতে খাবার শেষ হল। চললাম পরের দিনের অপেক্ষায় ঘুমোতে।

[চলবে]

শেষভাগ : ঠিক পরের দিন, একটু আলসেমির দিন॥ নাহ আজকে আমার কোনও তারা নেই। আজকে আমি শুধু সকালে হোটেল এ থাকবো। 31st May। আমার মেয়ের জন্মদিন। ভেবেছিলাম কাঞ্চন আজকে মেয়ের জন্য একবার হলেও আসবে। কিন্তু না একবার 2 মিনিট শুভ জন্মদিন বলেই চলে গেল। আজকে শুধু বিকেলে জয় রাইড আছে। ছোট বেলায় অনেক সস্থায় ভ্রমণ করায় এই টয় ট্রেন এ ওঠা হই নি। এবার সেই সুযোগ ছাড়তে চায় নি আমার মন। তাই অনেক আগেই IRCTC থেকে বিকেলের জয় রাইড টার টিকিট কেটে নিয়েছিলাম। তো কৌশিকী ও কৌস্তুরী তাদের second round শপিং এ বের হয়ে গেল। আমি আমার ব্যাগ এর ওজন কল্পনা করে খুব chintito ছিলাম। কিছু করার নেই। এইটুকু আব্দার মেনে নিতেই হবে। সকল টা শুধু বিশ্বজিত্‍ দর সঙ্গে আড্ডা দিয়ে ও সৌরভ বাবুর সঙ্গে গল্প করে কাটিয়ে দিলাম। সৌরভ বাবু আমাকে প্রমিস করেছিলেন যে এবার হল না কিন্তু পরে উনি আমাকে এমন জয়গায় রাখবেন যে আমি সারাজীবন টার প্রশংসা করব। সৌরভ বাবু ও তাপস বাবুর চেষ্টায় এতদূর আমি ভালই ছিলাম। আজকে দুপুরে সৌরভ ভাল রান্নার বাবস্থা করলেন। পেট ভোরে খেলাম। ক্যামেরা চার্জ দিলাম।  একটু গড়িয়ে নিয়ে বিকেল 4 টেই কম করে 30 টা সিড়ি নেমে চললাম দার্জিলিং স্টেশন এ । খুব একটা কিছু ভাল দেখতে নয়। কিন্তু তাও জন মোহময়ি। জয় রাইড এর ইঞ্জিন একমাত্র বাষ্প চালিত। তাই আমার ট্রেন খুজে নিতে দেরি হই নি। 1st Class কিন্তু বড্ড সেকেলে। হই তো এটাই টার সকীয়তা। ট্রেন ছেড়ে খানিকটা এগতেই জল নিতে দাড়িয়ে গেল। বেস কিছুখন জল নেবার পর কু ঝিক ঝিক করতে করতে চলল বাতাসিয়া লুপ। রাস্তার দু দিকে এত দোকান যে আর ভাল করে দেখা যায় না কিছু। শুধু একদিকে নগর র একদিকে বাজে ভাবে তৈরি করা পাহাড়। বাতাসিয়া তে আজকে ভিড় নেই।  পাঠক এই জয় রাইড টি সব সময় নেবেন। কারণ বিকেলে ভিড় কম থাকে ও শেষ সূর্য় আপনাকে সুন্দর বাতাসিয়া উপহার দেবে। নাহ এটি আগের দিনের বাতাসিয়া নয়। অজস্র নাম না জানা ফুলের বাহার একে র ও সুন্দর করে তুলেছে। 10 মিনিট ট্রেন দাড়িয়েছিল। মন কমন করে উঠল। উঠে পড়লাম ট্রেন এ।  পরবর্তি স্টেশন ঘূম। বদ্ধই পৃথিবীর 8ম উচ্চ তম স্টেশন। এখানে ট্রেন প্রায় 40 মিনিট দাড়ায়। এর মধে চলুন ঘূম মিউ৛িয়াম দেখে আসি। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও তত্কালীন রেল মন্ত্রী মাননীয় মমতা ব্যানার্জী এই museum টি উপহার দিয়েছিলেন। ভেতরে কিছু পুরোনো ও অমূল্য সংগ্রহ দেখলাম। মেয়ে আনন্দ পেয়েছে বলে মনে হল না। একটু যেন অসুস্থ। যাই হোক আবার চেপে বসলাম কু ঝিক ঝিক। এবার বোধই আমার মেয়ের একটু বমি পেল। ঠিক তাই। স্টেশন এ নেমে দেখলাম বমি করে ভাসিয়ে দিছে।  যাক গে, একটা ছোট গাড়ি ভাড়া করে সোজা হোটেল।  রাতে dominoz এ কিছু স্পেশাল খাবার অর্ডার দিয়েছিলাম। মেয়ে তাকে শুধু ভাত ঘি দিয়ে খাইয়ে দিলাম।  ঘুমিয়ে পড়ল।  আমরা একটু তাড়াতাড়িই গোছ গাছ করে নিলাম। খেয়ে ও নিলাম তাড়াতাড়িই।

পরের দিন ই আমার দার্জিলিং এ শেষ দিন। আজকে প্রাণেশ এল না। আগের দিন কিছু টাকা বাকি রেখে সবটা দিয়ে দিয়েছিলাম। আজকে একটু জন ঠকাল।  একজন সুম  ড্রাইভার কে পাঠিয়ে দিল। তবে সুম টি ভালই ছিল।  মেয়ের শরীর ঠিক হই নি। তবে বমি টা কমেছে।  আমি র একটুও পাহাড়ে থাকার রিস্ক নিলাম না। সুম ড্রাইভার সোনম লামা কে অনুরোধ করলাম যে তাড়াতাড়িই জন সে আমাদের নিচে নামিয়ে দেয়। একটু ব্যাগ গুলো টেনে দিতে বললাম। বুশ ছিল বিকেলে কিন্তু সকল সকল নেমে এলাম। সোনম খুব ভাল ছেলে ছিল । রাস্তায় তিতা পাতা দিয়েছিলো নাকে রাখার জন্য।   তাতে আমার মেয়ের বমিটা অনেক টা কমে যায়।  মাঝে tindharia তে একবার দাড়িয়ে ছিলাম, কিছু পেটে দেবার জন্য। এর পর র কোথাও থামি নি।  তবে রাস্তায় সোনম আমাকে টার প্রেম কাহিনী শুনিয়েছিল।  কিভাবে সে বুদ্ধিষ্ট হয়ে নেপালী মেয়ে কে বিয়ে করে ও তার জন্য তাকে ঘর ছাড়তে হয় এইসব টুকি টকই গল্প করতে করতে ও মন খারাপ নিয়ে নেমে এলাম শিলিগুড়ি। পাঠক আমি আবার যাব। আবার কাঞ্চন এর সাথে কথা বলব। আবার জিজ্ঞাসা করব কণ মাত্র একদিন আমাকে রাখা দিলে।

এর পরের ঘটনা খুব ই নিরস । একটি ভাল হোটেল এ কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম বিলাম। বিকেলে volvo bus এ চেপে ই ঘুম। তবে রাস্তা খুব খারাপ। তাই আমি বলব না আর volvo নয়।        পরের দিন সকলেই আবার বাড়ি আবার সেই পুরোনো জীবন।