Amazon

Lokenath Baba লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Lokenath Baba লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ৫ জুন, ২০১৫

চাকলা ধাম: (Chakla Dham)

আজকে আমি এমন একটি জায়গার কথা লিখব যার কোনও হয় তো আলাদা সুন্দর রূপ নেই কিন্তু সে স্বনামে বিখ্যাত। পাঠক সেই ব্রহ্মচারি যিনি বলেছিলেন "রণে, বনে, জলে , জঙ্গলে যেখানে বিপদে পরিবে আমাকে সরণ করিবে আমি তোমাদের রখ্যা করিব", তিনি তার জীবনের বেশির ভাগ সময় এখানেই কাটিয়েছেন। মুসলমান প্রধান একটি ছোট্ট শান্ত, শহর থেকে কাছেই গ্রাম । এর নাম চাকলা, লোকনাথ ব্রহ্মচারি বা ঘোষাল যে গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি নাম।

একটি ছুটির দিন একদম সকালে বেরিয়ে পড়লাম। কিছু পরামর্শ নিয়ে ঠিক করলাম বারাসাত থেকে যশোর রোড ধরে সোজা গুমা যাব। সেখান থেকে বদর হয়ে চাকলা। কিন্তু পথে শুনলাম গুমার আগেই বিড়া নামক একটি গ্রাম থেকে ডান দিকে মোটামুটি একটি রাস্তা দিয়ে গেলে আগেই পৌছানো যাবে।
সেই মত ঢুকে পড়লাম রাস্তায়। খানিকটা ভাল রাস্তা , খারাপ রাস্তা পেরিয়ে বদর পৌছালাম। এর মধ্যে বলে রাখা ভালো আমি গেছিলাম এই পুজোর কিছু দিন আগে। তাই রাস্তায় বিরক্তির জন্য যথেষ্ট উপাদান মজুত ছিল। মাঝে মাঝেই গাড়ি থামিয়ে চলছে চাঁদা নেবার উত্পাত। তবে দাবি বেশি ছিল না। 10 থেকে 20 টাকা। যাই হক আমরা 5 বন্ধু দুটো গাড়িতে করে এই সব বাধা পেরিয়ে বদর এসে পড়লাম। বদর থেকে বেশি দূরে নয়। এর মধ্যেই গ্রামের সুবাস এসে পড়েছে।  মাঝে মধ্যে পাস দিয়ে মোটর চালিত সাইকেল ভ্যান এর নতুন রুপ, ভ্যানও, চলেছে চাকলা ধাম। আমাদের মত অনেকেই আজ দর্শন গ্রাহী।  একটি নাম না জানা ছোট সুন্দর নদী পর করে চললাম।

কিছুখন পরেই এসে গেলাম চাকলা মন্দির। ঢোকার একটু আগে অনেক দোকান পাবেন। অনেকেই আপনাকে গাড়ি ফ্রী তে রাখার জয়গা করে দেবে। অনেকে আবার গাড়ির সামনেই বসে পাহারা ও দেবে। সেরকম ই একটি দোকান মালিকের কাছে গাড়ি রেখে ও তার দোকান থেকে পুজোর সামগ্রী কিনে নিলাম।
পাঠক মনে রাখবেন লোকনাথ ব্রহ্মচারি মিছিরি ও নকুল দানা বেশি পছন্দ করতেন, তাই এই দুটো অবশ্যই যেন আপনার সঙ্গে থাকে। মন্দিরে কোনও ধর্মের প্রবেশ অধিকারে আঘাত করে না। একটু হেটে এসেই সামনে উন্মোচিত ব্রহ্মচারির আশ্রম মন্দির। পরিষ্কার ও সুন্দর ভাবে রক্ষিত রাস্তা, এখানে আপনাকে জুতো খুলে পরিষ্কার ভাবে ঢুকতে হবে। একটি বেস বড়সড় দরজার মধে দিয়ে ঢুকে পড়লাম প্রধান মন্দির এর দরজায়। এখানে কোনও পাণ্ডা জাতীয় সেবায়েত সম্প্রদায় আপনাকে বিরক্ত করবে না। শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ এ দাড়িয়ে পড়ুন পুজোর লাইন এ।

আমরা ছুটির দিনে গেলেও খুব বেশিখন অপেক্ষা করি নি। তাড়াতাড়িই পুজো শেষ করে চলে গেলাম দুপুরে প্রসাদ এর বাবস্থা করতে। পাঠকগন সব স্থান এর মত এখানেও আপনি অনেক রকম দামে অনেক রকম প্রসাদ পেতে পারেন। 20 টাকা থেকে শুরু করে বসে খাবার জন্য 60 টাকা পর্যন্ত টিকেট এর বাবস্থা আছে। আপনি বাড়ি ও নিয়ে আস্তে পারেন। তবে বসে খেলে 7-8 রকম এর খাবার আপনাকে পরিবেশন করবে। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে এলে শুধু মাত্র পোলাও ও একটু পায়েস পেতে পারেন।  দাম 5 টাকা বেশি। দুটি অনুসন্ধান অফিস থেকে আপনি এই খাবার কেনার বাবস্থা করতে পারেন।

এর পর ঘুরতে শুরু করলাম, প্রধান মন্দির টি দুটি তল । প্রথম তলে ব্রহ্মচারির প্রধান পূজার জায়গা। দ্বিতীয় তলে আপনি পাবেন অনেক অনেক দেব দেবীর মন্দির যেমন হর গৌরী, আদি দেবতা, গণেশ ও অনেকেই। এই তলে পেছনের দিক টি সুন্দর একটি অনুভুতি এনেছিল। জানি না কেন কিন্তু মনে হল যেন এখানেই থেকে যাই। সেরকম কিছু নেই। অনেকটা বিশ্রাম নেবার মত জায়গা।  একটু বিশ্রাম নিয়ে নেমে এলাম। প্রধান মন্দির এর পাশে একটি উপসনা স্থল আছে। ভালো লাগবে।  র সামনে আছে বেস বড় মাপের একটি উদ্যান। খুব বেশি গাছ না থাকলেও বেস সবুজ। আপনার চোখ জুরিয়ে যাবেই। মন্দির এর দ্বিতীয় তল থেকেও আপনি আপনার চোখ কে আরাম দিতে পারেন, আবার নেমে এসেও তাই। সামনে একটি যজ্ঞ স্থল আছে। যেখানে শ্রাবণ মাসে যজ্ঞ হয় বলেই শুনলাম। মন ভরে গেল। আসে পাশে গ্রাম্য পরিবেশ। ছয় ঘেরা উদ্যান। এটি ছুটির দিনে আর কী চান পাঠক?

উদ্যানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্লাস্টিক গুলো বড্ড বেমানান।

অন্য উপাসনাস্থল এর পাশে আপনি স্মারক কেনার জন্য দোকান পাবেন। কিনতে পারেন নাও কিনতে পারেন। সামনের উদ্যানে একটু ঘুরে নিয়ে চলে এলাম প্রসাদ গ্রহণ স্থলে। এখানে লম্বা লাইন। প্রচণ্ড খিদে পেটে দাড়িয়ে দেখলাম হটাত্‍ ই লাইন র ও দির্ঘ্য হয়ে গেল। খুব ই সৌভাগ্য যে প্রথম ধাপেই বসার আসন পেয়ে গেলাম। একটি স্কুল এ পড়ার সময় বেবহার করা বেঞ্চ এ বসে পড়লাম। ঘি ভাত, থেকে শুরু করে, পোলাও হয়ে পায়েসে এসে যখন শেষ হল, পেট বেস ভর্তি। তবে সব খাবার যে সুস্বাদু ছিল টা নয়। পোলাও , পায়েস বেস ভালো ছিল।

খাবার পর আপনাকে নিজের পাতা নিজের হাতে নিয়ে নেমে আস্তে হবে। নিচে হাত ধোবার বাবস্থা আছে। আমরা 5 বন্ধু দুপুরের প্রসাদ গ্রহণ করে বেরিয়ে পড়লাম। এর মদ্ধে 3 টি প্রসাদ বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য নির্দিষ্ট অনুসন্ধান  অফিস যোগাযোগ করতে হল।  সহজেই নিয়ে নিলাম। পুজোর আগে যথেষ্ট গরম থাকা সত্তেও এই গ্রাম্য পরিবেশ এ আপনি যথেষ্ট আরাম অনুভব করবেন। তবে একদম শেষ দিকে আমাদের একটু কষ্ট হছিল। ব্রহ্মচারির কে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চললাম যে যার বাড়ির দিকে।

না পাঠক এখনো শেষ হই নি। ফেরার জন্য অন্য পথ ধরলাম। চাঁদা হাত থেকে বাঁচার জন্য মুসলমান প্রধান অঞ্চল বেরাচাঁপা দিয়ে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম। এবারে র কোনও বিরক্তি কারণ ঘটে নি। বেরাচাঁপা থেকে ডান দিকে ঘুরে বাসিরহাট-বারাসাত রোড ধরে ফিরে আস্তে লাগলাম। কিছু দূর এসে একটি সুন্দর কালী মন্দির এর পাশে চায়ের দোকানে দারালাম। একটু দূরেই ভেরী। মাছের ভেরির জন্য এই অঞ্চলটি বিখ্যাত। ভেরীর গায়ে , বিলের ধরে, কাশফুল। মন টা নেচে উঠল। এই তাহলে শারদীয়া শুভ সূচনা। কিছু ছবি আবার দিলাম।