Amazon

বুধবার, ১৩ মে, ২০১৫

রাজার দেশে ৫ রাত - ভুটান

পর্ব -১

অনেকদিনের ইচ্ছা মনে পোষা ছিল। একবার রাজার দেশ দেখে আসি। সঙ্গে নেব আমার কন্যা , স্ত্রী কৌশিকী , প্রাথমিক ভাবে অনেক বন্ধু যেতে রাজি থাকলেও মহেন্দ্রখন এ শুধুমাত্র আমার দুই শ্যালক ও পিসি পিসমসই আমার পেছনে এসে দাঁরালেন। শুরু হল তোড়জোড়। আমি আমার কন্যা কে সঙ্গে নিয়ে গেলে বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নি না। তাই প্রথম থেকেই সেই সিল্করুটে সঙ্গী জাবেদ আমার ব্যবস্থাপনায় আবার হাজির। এবার জাবেদ অনেক চেষ্টা করে নবীন দাকে যোগাড় করেছে। তাই নবীন দাও আমাদের সঙ্গী। ভুটান যাবার জন্য হাশিমারা নামক একটি স্টেশন এ নামতে হয়। মাত্র ২ মিনিট দাঁরায়। তাই ফেরার পথে ঠিক করলাম দূয়ার্স এর বূক চিরে নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে ফিরব।

সময় মত জাবেদ কাঞ্চনকন্যা নামক ট্রেন টির বাতানকুল ৩ সয়মান শ্রেণীর ৭ টি টিকিট কেটে ফেলল। বেশির ভাগ পার্ষবর্তী উপর শয্যা। তবে দুটি নিম্ন শয্যা ও যোগাড় করল। ফেরার টিকিট আমি নিজেই কাটলাম। ঠিক করলাম শেষ রাত এনজেপি স্টেশন এ কাটিয়ে পরের দিন ভোরে শতাব্দী ধরব।

দেখতে দেখতে দিন এসে গেল। এনজেপি স্টেশন এ রাত কাটাবার জন্য dormitory কিভাবে ভাড়া করব খুজতে খুজতে দেখলাম IRCTC তাদের ওয়েবসাইট এ সুন্দর বাবস্থা করে রেখেছে। বাগ গোছানো শেষ হতেই চটপট PNR নাম্বার দিয়ে dormitory তে ৬ টি শয্যা নিয়ে নিলাম। রাত কাটানোর চিন্তা দূর হল। বেরিয়ে পড়লাম, রাজার দেশে। ঠিক সময় কাঞ্চনকন্যা শেয়ালদহ ছেড়ে দিল। আমার মেয়ে বন্ধু পেয়ে গেল। প্রায় সমবয়সী একটি মেয়ে। একটু বড়। খুব গল্প।

দেখতে দেখতে রাত পার হয়ে গেল। সাধারণত ট্রেন এ আর ঘুম আসে না। এবার ও এল না। সকাল সকাল এনজেপি কে পেছনে ফেলে দূয়ার্স এর বূক চিরে আমাদের ট্রেন চলেছে হাসিমারা। আগের দিন রাতে হয়ে যাওয়া বিধংসি ঝরে শুয়ে পরা গাছ দেখতে দেখতে ঘন অরণ্যের মধ্যে দিয়ে একের পর এক নদী যেমন, তোর্ষা, ডায়না ইত্যাদি পেরিয়ে, মাত্র ১ ঘণ্টা দেরিতে পৌছালাম হাসিমারা। পেটে খিদে। তবে খাব জয়গা পৌছে। আমাদের সঙ্গী গাড়ি চালক রাজু প্রধান হাজির।

যথারীতি ট্রেন থেকে নেমেই জাবেদ এর মনে পড়ল তার বিয়ের ঘড়ি খুজে পাচ্ছে না। সৌভাগ্যক্রমে কাঞ্চনকন্যা বেস খানিখন দাড়িয়ে। নবীন দা ছুটল ঘড়ি খুজতে। না, পাওয়া গেল না। ...


পর্ব-2

ঘড়ি বা অন্তত কিছু হারানো জাবেদ এর পুরোনো অভ্যাস। বিয়ের ঘড়ি শুনিয়ে টীম মেম্বারদের সহানুভূতি কুরলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এই ঘটনা নতুন নয়। ট্রেন এ পাওয়া না গেলেও ব্যাগ এ ঠিক থাকবেই। হল ও তাই। অন্তত 2 রাউন্ড ব্যাগ খোজার পরে আপাত নিরীহ একটি খাপ থেকে ঘড়িবাবু উঁকি দিলেন। আমি প্রায় মেরেই ফেলবো ওকে। একে পেটে খিদে। মেয়ের জন্য চিন্তা নেই। সে এখন ভুটান যেতে ব্যস্ত।

আমরা আজকে জয়গা বা ফুংত্সেইলিঙ্গ এ থাকবো না। অনেকেই যদিও থাকেন। ভুটান যেতে গেলে রাজার সরকার অনুমতি দেন। তবেই আপনি রাজধানী থিম্পু বা পারো মত শহর গুলি ঘুরতে পারবেন। এই অনুমতি আপনি ভুটান ঢোকার মুখে ফুংত্সেইলিঙ্গ এ অভিবাসন দফতর থেকে লাইন দিয়ে পেতে পারেন, লাগবে ভোটের কার্ড বা পাসপোর্ট। সঙ্গে এক কপি পাসপোর্ট মাপের ছবি। কম করে 2-3 ঘণ্টা দাড়াতে হবে বা আরও বেশি। আমরা এই ভাবে অনুমতি নেই নি। আমরা 1 মাস আগেই কলকাতার দমদম এ নাগেরবাজার থেকে হাঁটা দুরত্তে অবস্থিত ভুটান দূতাবাস এর দরজায় প্রততেক এর জন্য একটি ফর্ম পূরণ করে সঙ্গে ভোটের কার্ডের নকল ও ছবি জমা দিয়ে এসেছিলাম। কিছুদিন বাদে ওরাই অনুমতি পত্র প্রদান করে। আমার মেয়ের জন্য জন্মের শংসাপত্র এর নকল জমা দিতে হয়েছিল। সঙ্গে অবসশই আসলটি ও ওনারা দেখতে চান, তবে জমা নেন না। সেই প্রথম আমার মেয়ে কোনও সরকারী কাগজে সই করে। বুঝতেই পারছেন তার উত্সাহ তো বেশি হবেই।

হাসিমারা থেকে দুপাশে একের পর এক সবুজ চা বাগান কে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে থাকলাম, গন্তব্য জয়গা। পথে মাঝে মধ্যেই গাছের গুড়ি পরে, আগের দিনের ঝড়ের চিহ্ন। এবার আমাদের বোলেরো গাড়ির সামনের সীট আমার দখলে। সবুজ, সবুজ আরও সবুজ। সঙ্গে উঁকি দিচ্ছে হিমালয়। না, শ্বেতশুভ্র নয়, বরং এক চিরসবুজ রূপ।
এসে গেল জয়গা। ভারতের শেষ, এর পরে ভুটান গেট, ওপাশেই ভুটান। খেতে বসলাম। ভেবেছিলাম একটু স্নান করে নেব। ভাগ্যে নেই। আগেরদিনের কালবৈশাখী মহারাজ শুধু যে ধংস করেছেন তাই নয়, সঙ্গে সঙ্গে জল, বিদ্যুত্‍ সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন। হাত ধোবার জল ও পানীয় জল ছাড়া কিছু নেই। তাই দিয়ে কোনওরকমে ভাত খেয়ে মুখ হাত ধুয়ে ভারতীয় সময় 2 টো আমাদের গাড়ি ভুটান গেট অতিক্রম করলো। ঘড়ি আধ ঘণ্টা এগিয়ে নিলাম। শুরু হলো রাজার দেশে প্রবেশ, এমন একটি দেশ যারা প্রথম মানুষকে সুখী করতে চায়। দেখতে চায় এই কঠিন ভূপ্রকৃতিক পরিবেশে থেকে মানুষকে কতটা সুখী করা যায়।

শুরু হলো পাহাড়। ফুংত্সেইলিঙ্গ এ কিচ্ছু বৌদ্ধ বিহার ও কুমিরপার্ক থাকলেও আমরা আপাতত চলেছি থিম্পু, পৌছতে দেরি হবে, তাই ফেরার পথেই দেখে নেব। ভারতীয় সরকার এর সহযোগিতায় তৈরি সুন্দর ঝকঝকে রাস্তা ধরে গাড়ি ছুটছে। স্পীডমিটার কখনো কখনো ৮০ ছুয়ে যাচ্ছে। পাঠক ভাবুন , পাহাড়ী রাস্তায় এই স্পীড। কলকাতাবাসীর কাছে স্বপ্ন। দেখত্যে দেখতে প্রথম বাধা। চেকপোস্ট। এখানে আমাদের অনুমতি পত্র দেখাতে হলো। রাজার সরকার আমাদের ঢুকে যাবার সীলমোহর দিয়ে দিল। রাজু একজন ভারতীয়, তার গাড়িও ভারতীয়। তাদের দুজনের ই অনুমতিপত্র দেখাতে হলো।

খুব বেশিখন নয়। আবার যাত্রা শুরু। বা দিকে স্বপনের পাহাড়, ডান দিকে খাদ। খাদে দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে দূরে বহু দূরে বয়ে চলা নদী ও ঝর্ণা। পাঠক, প্রথম চেকপোস্ট অতিক্রম করার পরেই রাস্তার দু দিকে তাকালেই বুঝবেন, আপনি ভারতবর্ষে নেই। এতক্ষণ পর্যন্ত পড়ে থাকা প্লাস্টিক ও বর্জ পদার্থ হটাত্‍ উধাও। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে পাহাড় ভেঙে আসা পাথর। মাঝে মধ্যে উঁকি দিচ্ছে ছোট ছোট দোকান। দোকান গুলো অস্থায়ী। ভুটানী সভ্যতার নিয়ম অনুসারে এদের যে কোনও সম্পত্তি, ঘর, বাড়ি চাদ টি ত্রিভুজ আকৃতির হয়। এদের দোকান গুলিতেও একসঙ্গে অনেকে স্থানীয আনাজ পাতি সঙ্গে চীজ জাতীয় দুগ্ধ জাত খাবার এর পসরা নিয়ে বসেন।

চোখে পড়ল আগের দিনের ঝড়ের নমুনা। একদম উত্পাটিত একটি দোকান রাস্তার ওপরে। এছাড়াও পরে থাকা পাথরের টুকরো, গাছ, ইত্যাদি জানান দিল কালকে কী ঘটে গেছে। তবে ছবির মত একের পর এক পাহাড় পেরতে লাগলাম। হটাত্‍ মন খারাপ হয়েগেল। একটি বাঁক পেরতেই দেখলাম ভুটান

রাজার আপতকালীন গাড়ি দাড়িয়ে, সঙ্গে কিছু মানুষের উঁকিঝুকি, নিচে খাদের দিকে। রাজু জানালো, কোনও গাড়ি খাদে পরে গেছে, সদ্য।

পর্ব -৩

কোনও একটি গাড়ি খাদে পড়ে যাবার খবরে খুব ই দুখিত হলাম। কিন্তু দাঁরাবার সময় নেই। থিম্পু পৌছতে হিসেব মত ৬ ঘণ্টা লাগে। তাই চলতে থাকলাম। গাড়ি চালু হবার আগেই রাজু বলে দিয়েছিলো উপরে কিন্তু বেশ ঠান্ডা। গরম জামাকাপর যেন হাতের কাছে নিয়ে নি।  আমি সেরকম কিছু রাখি নি।  তবে বাকিরা গরম জামা সঙ্গে রেখেছিল। ঠান্ডা সম্পর্কে একটু বেশি সচেতন পিসেমশাই কিন্তু প্রথমেই সোএটার পড়ে নিয়েছিলেন, হাসিমারাতেই, যদিও তখন বেশ গরম। গরমের উত্‍পাতে জয়গা আসার আগেই তাকে সোএটার খুলতে হয়। এবার আবার গরম জামা পরার পালা। মাঝে দাঁরালাম। একটি ভুটানী কলেজ, ও তার উল্টো দিকে বৌদ্ধ বিহার, স্থানীয ভাবে একে বলা হয় শর্তেন। বুদ্ধের বাণী লেখা গোল গোল ঘোরানো যায় এরকম সিলিন্ডার এর মত আকৃতির ধর্মীয় ও পবিত্র বস্তুর উপস্থিতি চোখে পড়তে থাকলো। ছবি তুললাম। মেয়ে খুব খুশি। প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। শরীর সুস্থ।

চা দরকার। সুতরাং আর একটু গিয়ে আবার দাঁরালাম চা খেতে। একটি ছোট ভুটানী দোকান, সঙ্গে ঘর। এর মধ্যে একটি জিনিস লক্ষ্য করলাম। প্রায় প্রতিটিই দোকানেই সূরা একদম সহজলভ্য। এই চায়ের দোকানেও সূরা বিক্রি হচ্ছে। আমরা চা ই খেলাম। কেক, বিস্কুট কিনে নিলাম। প্রথম রাজার ছবি সহ ভুটানী মুদ্রা আমার হাতে। ভুটানী মুদ্রার সংখিপ্ত নাম নু (nu)। এর মূল্য ভারতীয় টাকায় সমান সমান। পাঠক, আপনাকে ভারতীয় টাকা ভুটানী মুদ্রায় পরিবর্তণ করতে হবে না। কারণ ভুটান ব্যাপী ভারতীয় মুদ্রা সচল, আপনি টাকায় যেকোনো জিনিস কিনতে পারবেন, যেকোনো কাজে টাকা ব্যবহার
করতেও পারবেন। তবে অতিরিক্ত টাকটি ভুটানী নু তেই ফেরত পাবেন। গাড়ি চলতে থাকলো, পাহাড়ের বুক চিরে।

রাজুর একটি বৈশিষ্ঠ লক্ষ্য করলাম, ও এক টানা গাড়ি চালায় না। আধ এক ঘণ্টা অন্তর গাড়ি দাঁর করিয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিচ্ছে, সেই মত আবার একটি দোকানের সামনে দাঁরালো। উদ্দেশ্য বিশ্রাম সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ।
দোকানের বাইরে বেরলেই চোখের সামনে চুখা জলবিদ্যুত কেন্দ্র, তবে অনেক নিচে। চুখা ছু বা নদীতে বাধ দিয়ে এই প্রকল্প। ভুটান রাজ্যের বেশীরভাগ বিদ্যুত্‍ চাহিদা এতেই মিটছে। পড়ন্ত সূর্য় একে আরো মোহময় করে তুলেছে। ভুটানী ভদ্রতার নিদর্শন চোখে পরলো। সাধারণত আমাদের দেশে যেখানে লেখা থাকে "এখানে নোংরা ফেলবেন না" জাতীয় নির্দেশ, সেখানে ওখানে "এখানে নোংরা না ফেলার জন্য ধন্যবাদ"। তবে অসুস্থ সহযাত্রীর জন্য হয়তো এই ভদ্রতা যথেষ্ট নয়। সারাদিনের ধকল না নিতে পেরে , সকালের খাবার সেখানেই উগরে দিলেন এক সহযাত্রিণী।

একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার চলতে থাকা। সন্ধে নামার আগে আবার বিশ্রাম নিতে হলো। গাড়ির কিছু অত্যাবশক যন্ত্রে ত্রুটির কারণে চলল সারাই। এখানে আমাদের প্রায় আধ ঘণ্টা নষ্ট হলো। আবার শুরু যাত্রা। স্পীড ও বাড়ছে। দেখতে দেখতে চওড়া রাস্তা ছেড়ে সরু গিরিপথ অতিক্রম করে আবার রাজসড়ক। প্রায় থিম্পু এসে গেছি। আবার চেকপোস্ট। একি ভাবে রাজু নেমে গিয়ে অনুমতিপত্রে সীলমোহর লাগিয়ে চলে এল। এর মধ্যেই অন্ধকার নেমে এসেছে। সন্ধে বলে কিছু নেই। ঘন অন্ধকার। উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ি গুলো বুকের মধ্যে হাতুড়ি পিটিয়ে হুস করে চলে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে ও ধৈর্যর পরিখ্যা দিতে দিতে পৌছে গেলাম থিম্পু গেট। তখন বুঝিনি আমাদের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক বাম  দিকেই বয়ে চলেছে থিম্পু ছু বা থিম্পু নদী। গেট পেরনোর একটু পর থেকেই ছবির শহর শুরু। ভুটানী সংকৃতির আদলে তৈরি একের পর এক অট্টালিকা, যেন স্বপ্ন দেখা শুরু।

পর্ব-৪

স্বপ্ন দেখা শুরু। ভুটানী আদব কায়দা, সঙ্গে সঙ্গে ত্রিভুজাকৃতির ছাদ বিশিষ্ঠ অট্টালিকায় ছবির মত একটি শহর। রস্থায় স্পীড ব্রেকার গুলিও একটু নতুন। কলকাতার রাস্তায় যেরকম হোচট খেতে হয়, তার আশেপাশে নেই। রাস্থায় বা দিক থেকে ডান দিকে যেতে গেলে অনুসারী রাস্তা ধরে নিচে নেমে যেতে হচ্ছে। এর ফলে আপনাকে দীর্ঘখন লাল বাতির চোখ রাঙানি সয্য করতে হবে না। শহর থেকে একটু দূরে , একটু ওপরে আমাদের হোটেল এসে পৌছালাম। নির্মল লজ। বেশ সুন্দর। ঘর গুলো একটু পুরোনো হলেও যথেষ্ট আরামদায়ক ও সুশোজ্জিত। গরম জলের ব্যবস্থা আছে। এদিকে বিপদ হল মোবাইল ফোনে কোনও ভারতীয় টাওয়ার নেই। যোগাড় করতে হবে ভুটানী সীম। বাড়িতেও খবর দিতে পারছি না। শ্যাম আমাদের বিপদ মুক্ত করল। শ্যাম এর পরিচয় পড়ে দিচ্ছি। আমরা হোটেল এ জানলাম বিনাপয়সায় ওয়াইফাই পাওয়া যাচ্ছে। যাক নিশ্চিন্ত। তবে পাসওয়ার্ড আমাদের না জানিয়ে হোটেল কর্মচারী এক অল্পবয়স্কা কন্যা আমাদের মোবাইল এ যুক্ত করে দিলেন। বেশ তাগড়াই ইন্টারনেট। সহজেই বাড়িতে whatsapp এর মধ্যমে খবর পাঠিয়ে দিলাম। শ্যাম আমাদের অনুমতিপত্র গুলি নিয়ে চলে গেল। তৃতীয়দিন পুনাখা যেতে গেলে আবার একটি অনুমতিপত্র লাগবে তাই। জলদি জলদি রাতের খাবার খেয়ে নিদ্রাদেবী কে ডেকে নিলাম।

পরের দিন একটু সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো। চোখের সামনে ছিটে ছিটে বরফ আবৃত শৃঙ্গ। হালকা সবুজ উদ্ভিদ, বেশীরভাগ উন্মুক্ত পাহাড়ী চূড়া সঙ্গে বরফের ছিট। একসঙ্গে সব। বা দিকে তাকালেই পুরো থিম্পু শহরটির একটি নির্যাস চোখের সামনে। ক্যামেরা কাজ শুরু করল। মেয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। আজকে থিম্পু শহর ঘুরতে যাব। মাথায় আছে মোবাইল সীম যোগাড় করা।

রাজু সঠিক সময় সকালসকাল হাজির। আজকে আমাকে পেছনের সীট এ বসতে হল। প্রথম পৌছালাম জাতীয় সৃতি স্তুপ বা National Memorial Chorten। এখানে ভুটান রাজা জিগমে দরজি Wangchuk তৈরি করেছেন। রাজা চেয়েছিলেন তার জীবদ্দশায় একটি বৌদ্ধ স্তুপ তৈরি করতে যেটি বুদ্ধের মনকে প্রকাশ করে। এই স্তুপ টিতে অনেকগুলি ঘণ্টা আছে আর আছে বাণী। একটি সুবিশাল বাগান দেখলাম। এর অনেকগুলি দরজা আছে। দরজাগুলি যথাক্রমে সমবেদনা, জ্ঞান, ও শক্তির প্রকাশক। শান্তির দেশে পায়রা থাকবে না হয় না। প্রচুর অবাধ পায়রার উপস্থিতি জানিয়ে দেবে আপনি শান্তির দেশে।

পরবর্তি গন্তব্য ধ্যান এ মগ্ন বুদ্ধ, Sitting Buddha। পাহাড়ের ওপরে সুবিশাল বুদ্ধদেব। ধ্যানে মগ্ন। ভারত, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান প্রভৃতি দেশের সহযোগিতায় এটি অষ্টম আশ্চর্য হতে চলেছে। আসেপাশে বরফ ঢাকা পাহাড় চূড়া। দূর থেকে দেখতে পাওয়া থিম্পু হেলিপ্যাড, ও থিম্পু শহরের একাংশ।

প্রকৃতি আজকে শান্ত। মেঘ নেই। ঝলমলে রোদ বুদ্ধদেবের সোনালী মূর্তির ওপরে মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। পাঠক আমি বেশ কিছুখন স্তব্ধ হয়ে দেখলাম। সামনে সুবিশাল প্রান্তর। বাধান। ফিরতে মন চাইছিল না, ফিরতে হল।

পরবর্তি গন্তব্য চুয়ালখা বৌদ্ধ বিহার। তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী সংস্কৃতিতে তৈরি বিহারীটি একটু সিড়ি বেয়ে উঠতে হয়। বলা হয়, সন্তান লাভের জন্য বা সন্তানের মঙ্গল কামনায় এখানে আসতে হয়। জাবেদ এর সন্তান লাভ প্রয়োজন। অদ্ভূত ব্যাপার কী জানেন? এর ঠিক 3 রাত পরেই , জাবেদ জানতে পারে সে বাবা হতে চলেছে। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।

এবার এসে পৌছলাম  টাকিন বা চিড়িয়াখানায়। ভুটানের জাতীয় পশু। নিরামিষাশী। তবে রাগী। খানিকটা চমরিগাই এর মত দেখতে বেশ বড়। জাবেদ নবীন ড সহ অনেকের ই ইচ্ছা হলো একসঙ্গে ছবি তোলার। দু একজন তুললো। তবে টাকিন বাবু কিন্তু খাঁচার মধ্যেই। গায়ে ভিশন গন্ধ। সুবিশাল অরণ্য ও তাতে অবাধ বিচরণ। শুধু দর্শকদের দিকটি তার দিয়ে ঘেরা। সাক্ষাত্‍ হলো রডোডেনড্রোন এর সঙ্গে। অতি উত্‍সহি আমার শ্যালক গণ চেষ্টা করেও একটিও তুলতে পরলো না। একটু দূরে, একটু হাতের আড়ালে।


পর্ব - 5

টাকিন এর সঙ্গে মোলাকাত শেষ হলে আমরা বেরিয়ে এলাম, এবার গন্তব্য জাদুঘর । মাঝে একটি স্থানে দাঁড়িয়ে এক পলকে দেখে নিলাম রাজার বাড়ি, লোকসভা কেন্দ্র ও অফিস পাড়া। ছবির মত সাজানো, ভুটানী স্থাপত্তে তৈরি। পৌছে গেলাম জাদুঘর। অদ্ভুত সুন্দর এই মিউজিয়াম। ঢোকার মুখে একটি রেস্তোরা। খাদ্য বেশ দামি। জাবেদ তো খাওয়াবে না নিশ্চিত। আমাদের পকেট এও এত জোর নেই যে সেখানে ঢুকি। চললাম টিকিট কাটতে। যদিও কেউ টিকিট দেখল না, তবুও টিকিট কেটে নিলাম, 20 ভুটানী টাকা প্রতিজন। এগিয়ে চললাম মিউজিয়াম এর ভেতরে। সুন্দর , অতীব সুন্দর। একটু পুরোনো। ভেতরে 4 টি তল বিশিষ্ঠ। একদম নিচের তল থেকে শুরু ভুটানী প্রাচীনত্য। কিভাবে ভুটানী সভ্যতা সাবালক হয়েছে ধীরে ধীরে তার নমুনা সম্বলিত সৃতির মনিকোঠায় স্থান করে নেওয়া একের পর এক নিদর্শন। খাটাল এর আদিম রূপ থেকে শুরু করে রান্না ঘর পেরিয়ে অস্ত্র ও অস্থাবল এর প্রাচীন রূপ আপনার সামনে হাজির। ছবি তোলা নিষেধ। এক একটি তলে ওঠার সিঁড়ি বেশ খাঁড়াই। একটু নিচু ছাদ। তবে একটু সাবধানে ওঠা নামা করাই যায়। 

একদম ওপরে একটি ঘরে ভুটানী জনগণএর সাহায্যে কিছু দান করার অনুরোধ ও থাকছে। করতেও পারেন নাও করতে পারেন। সবকিছু দেখে নেমে এলাম। কৌশিকী ও মেয়ে সিঁড়ির প্রসারতা দেখে ওঠার সাহস দেখায় নি। এখন আমাদের সঙ্গে যোগ দিল। কাঠের গুড়ির মত দেখতে বসার যায়গায় বসে একটু হাপিয়ে নিলাম। তারপর বিদায় জানিয়ে চললাম জাতীয় গ্রন্থাগার দেখতে। 

জাতীয় গ্রন্থাগার, আবার সেই ভুটানী স্থাপত্তের চুড়ান্ত নিদর্শন। দুটি ভাগ। আপনি ঢুকে যেকোনো বই পরতেও পারেন, কেনার সুযোগ ও থাকছে। সামনের দিকে একটি ছোট ঘর থেকে বিক্রি হয়। ভুটান ও তাঁর জনগণের ওপরে লেখা একটি বই আমার পছন্দ হয়েছিল। সম্পুর্ন ইতিহাস ছিলো। বাধা হয়ে দাঁড়াল সেই পকেট। দাম মাত্র $40। কিনতে পারিনি। তবে কিনব কোনদিন। এখানেই দেখলাম ভুটানে ছাপানো সবথেকে বড় পুস্তক। একটি বড় কাঁচের বক্সে রাখা। রাজার উপস্থিতি এখানেও বিদ্যমান। এই প্রথম একটি দেশ দেখলাম যার রাজা চাইছেন গনতন্ত্র, প্রজা চাইছে না।

জোর খিদে পেয়েছে সবার। ডাকডাকির চোটে ছুটতে হল একটি রেস্তোরায়। সেই আবার কোনরকমে গিলে নিলাম। একদম ই খাবার ভাল না। খাবার শেষ, চললাম শহর ঘুরতে। উদ্যেশ একটি মোবাইল সীম। দোকান পেলাম কিন্তু দিল না।  পাসপোর্ট বা অনুমতিপত্র যে কোনও একটি দেখাতে হবে। আমি পাসপোর্ট নিয়ে যাই নি, অনুমতিপত্র শ্যাম নিয়ে গেছে, পরের দিনের পুনাখার অনুমতি লাভের জন্য। বিফল হয়ে ফিরে এলাম হোটেল।

আমরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছি, জাবেদ সঙ্গে আনা পাসপোর্ট নিয়ে অনেকটা নিচে নেমে এবং ততটাই কষ্টে উপরে উঠে 4 টে সীম এনেদিলো। খুব খুশি। জাবেদ কে ধন্যবাদ দিলাম। প্রথম কথা হলো বাড়ির সঙ্গে। প্রতি মিনিট 7 টাকা। পরের দিন পুনাখা যাবার আশা নিয়ে শুয়ে পড়লাম।









 পর্ব -6

আজকে বেশ সকাল সকাল উঠত্তে হলো। রাজু বলে দিয়েছিলো, দ্রচুলা গিরিপথে কাজ হবার জন্য রাস্তা মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকছে। এই পথেই আমরা পুনাখা দেখতে যাব। সেই মত বেরলাম। প্রথমেই বিপত্তি। একটি গাড়িতে 9 জন কে কিছুতেই চেকপোস্ট ছাড়বে না। রাজু অনেক কাকুতি মিনতি করছে। একের পর এক গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। শেষে জাবেদ নেমে অনুরোধ করে। আমার মেয়ের বয়স 7 হওয়াতে ছেড়ে দেয়। গাড়ি চলতে থাকে। একটু পরেই দ্রচুলা গিরিপথের মুখে শহীদ স্তুপের সামনে। এই অঞ্চলে অনেকগুলি স্তুপ বানানো আছে। সবই বুদ্ধের সংকল্প করে। জানতে পারলাম, ভুটান রাজ্যে অতিবিরল কাজ হলো যুদ্ধ। ব্রিটিশ দের সঙ্গে সল্প সংঘাত ও নেপালী ভুটানী লড়াই উত্তর যুগে একমাত্র বিপদজনক ও উদ্যেগ পূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল 2003 সালে। যখন কিছু ভারতীয় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন দক্ষিণ ভুটান এর জঙ্গলে ঘাটি গেড়ে অপকর্ম শুরু করে। ভুটান রাজার শান্তি প্রস্তাব প্রতাখ্যান করে।  
বাধ্য হয়ে রাজার সৈন্য এই ভারতীয় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন গুলিকে ভুটানের মাটি থেকে বিতাড়িত করে। সেই যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্মৃতিতে এই স্তুপগুলি। বীর সেনানীদের কুর্নিশ জানালাম।

এদিকে বেশ ঠান্ডা, সঙ্গে হু হু করে বয়ে চলা হিমেল হওয়া। জাবেদ আমাদের সঠিক তথ্য দিতে পারে নি। তাই সবাই সেভাবে তৈরি ছিলাম না। মেয়েটার একটু ঠান্ডা লাগলেও মানিয়ে নিলো। উল্টো দিকেই দারুন এক রেস্তোরা। ঢুকেই কফী ও কিছু ভারী পানীয় খেতে বসে পড়লাম। মেয়ে আরাম করে এক কাপ গরম গরম কফী খেয়ে নিলো। কফী জাবেদ খাওয়াল। যদিও প্রথম থেকে বলে নি। তবুও প্যাকেজ এর বাইরে খাবার এর জন্য ধন্যবাদ।

এদিকে একটু বেশি সময় রেস্তোরাতে কাটিয়ে ফেলায় রাজু চলে এল ডাকতে। ভাবলাম বোধয় তাড়াতাড়ি ফেরার জন্য বলছে, কিন্তু না, সত্তি রাস্তা বন্ধ। আমাদের প্রায় অধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। কী করা যায়। গাড়ি থেকে নেমে পাশের উঁচু টিলায় দুই ভূটিয়া পুলিস এর সঙ্গে ভাব জমালাম। এটা আমার স্বভাব। স্থানীয লোকেদের সঙ্গে গল্প করা ও তাদের থেকে তথ্য নেওয়া। তাদের থেকেই শুনলাম প্রচুর ভারতীয় ও বাঙালি শিক্ষক থিমফু তে শিক্ষকতা করেন। আরও শুনলাম, ওরা খুব খুশি, চাকরি না পাওয়ার দুর্বিষহ চিন্তা খানিকটা হলেও মুক্ত। গনতন্ত্র এসেছে, প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, কিন্তু তবু ওরা রাজকেই চায়। 

প্রায় আধ ঘণ্টা, এদিক ওদিক এই টিলা ওই টিলা চেপে কাটিয়ে দেবার পর আবার যাত্রার অনুমতি মিললো। ঘণ্টা খানেকের গাড়ি যাত্রার পরেই দেখা মিললো ফো ছু (বাবা নদী) ও মো ছু (মা নদী)। এদের দুজনের ঠিক মাঝে অপূর্ব সুন্দর ছোট দ্বীপ। আর সেখানেই পুনাখা ড-জং, যা পুনাখা জেলার প্রধান কার্য্যালয়, আবার বৌদ্ধ উপাসনালয়। পুনাখা ড-জং এর অপর নাম পুংতাঙ্গ দেছেন ফত্‍রঙ্গ ড-জং , যার অর্থ ভীষণ খুশির বা আশীর্বদের স্থান। একটি কাঠের 200 বছরের পুরোনো সেতু পেরিয়ে পৌছে গেলাম প্রধান ফটকে। ঢুকতেই দেখলাম মৌচাক। বেশ বড় বড়। তবে মৌমাছির উত্পাত নেই। একটু এগিয়ে প্রধান ফটকে ঢোকার জন্য বেশ উঁচু সিঁড়ি। কাঠের সিঁড়ি। সাবধানে উঠে পরলাম। ওপরে ভুটানী পুলিস, আবার অনুমতিপত্র দেখাতে হবে।

প্রথম বাধা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। প্রাচীন ভুটানী কারুকার্য সমৃধ্য একের পর এক দৃশ্য উন্মোচিত। ঢুকতেই দশাবতার সদৃশ রাশি চক্র ও গোপন কিছু সংকেত, স্থানিয়দের ভাষায় এই সংকেত এক মাত্র যিনি বানিয়েছেন তিনি উদ্ধার করতে পারবে, সুতরাং এটি অভেদ্ধ। এগিয়ে চললাম। ভেতরে দু দিক দিয়ে দ্বিতল লম্বা সারিসারি ঘর। এগুলো ছাত্র ও লামাদের বসতি। ঠিক মাঝে 4 তলা বিশিষ্ঠ মন্দির। এখানে বুদ্ধদেব বিরাজমান। আরও এগলে উপাসনাস্থল। প্রধান মন্দিরে কিছু অংশ ছবি তোলা নিষেধ। তবে অদ্ভুত দেখলাম, কেউ ছবি তুলছেও না, আর বারন করার জন্য কেউ নেই। দুর্ণাম কুড়নো

ভারতীয় পর্যটকরাও অদ্ভুত ভাবে নিয়ম মেনে চলছে। সঙ্গে উপস্থিত সারি সারি পায়রা। শান্তির দূত।

প্রধান ফটক ঘুরে বেরিয়ে এলাম। ফটকের পেছনের দিকটা আরও কিছু নিয়ে সেজেগুজে অপেখ্যা করছে। ঝকঝকে পরিষ্কার জল সমৃধ্য ছোট্ট জলাশয়। সঙ্গে মন ভালো  করে দেওয়া হওয়া। বেশ বড় ঘাসে মোরা মাঠ। জলাশয় ভর্তি মাছ। একটু বসে পরলাম। মেয়ে ঘাসের ওপরে শুয়েই পরলো। সুন্দর সাজানো বাগান ও সঙ্গে ছবির মত পিচের রাস্তা। আহা স্বপ্ন দেখছি।   বিকেল হয়ে আসছে। বেরতে হবে। নদী পেরনর সেতুর মুখে খানিখন বিশ্রাম নিলাম। দেশ বিদেশের পর্যটকদের আনাগোনা লক্ষ্য করলাম। ধীরে ধীরে মন খারাপ নিয়ে বিদায় জানালাম।

ফেরার পথে ছোট্ট একটি ভিউ পয়েন্ট। দাঁড়িয়ে পরলাম। চোখের সামনে পুরো ড-জং ও তাকে ঘিরে থাক বাবা ও মা নদীর মিলনস্থল। পেছনে একের পর এক সারি দিয়ে দাড়িয়ে থাকা পর্বত শৃঙ্গ। দেখে নিলাম, এখানে নৌকা বিহার হয়।

এবার আবার থিমফু ফেরা। রাত হয়ে গেল। রাতের মায়াবী থিমফু চোখের সামনে। মন খারাপ। কালকে চলে যাব পার। আর এক স্বপ্নএর শুরু
















 পর্ব-7

একটু দেরি করেই বেরলাম। আজকের গন্তব্য পারো শহর। বলা হয় ভুটান এর সব থেকে সুন্দর শহর। তাই একে একে 3 রাত কাটানো নির্মল লজ কে টা টা বলে গাড়ি ছেড়ে দিলাম। প্রধান থিমফু গেট পেরতেই চোখের সামনে পারো সেতু। গেট পেরিয়ে সোজা গেলে ফুণ্টসেলিঙ্গ, আর ডান দিকে ঘুরলেই পারো সেতু। সেতুর সামনেই পারো নদী ও থিমফু নদী মিলিত হয়ে স্বপ্নের জলধারা সৃষ্টি করেছে। সেতুতে খানিখন দাঁড়ালাম। সেতুর মুখে একটি স্থানীয দোকান থেকে কৌশিকী কিছু বিস্কুট ও লজেন্স কিনল। সঙ্গে সঙ্গে পেটুক কুল, বিশেষ করে জাবেদ ধংস করতে শুরু করলো। সামনে কুল কুল করে বয়ে

চলেছে দুটি নদী, অপূর্ব সুন্দর পাহাড়, আর মুখে অদ্ভুত সুন্দর স্বাদের লজেন্স। অবহাওয়া মনোরম। একটু ছবিটবি তুলেই গাড়ি চলতে শুরু। পারো নদী এখন বাম দিকে। আমাদের সঙ্গী। একটু পরেই ছিমছাম অথচ ছবির মত ছোট্ট সেতু পেড়লাম। থিমফুর মত অত অট্টালিকা নেই, কিন্তু মনে হবে তুলির টানে আঁকা শহর। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পেরলাম। দুদিন আগেই বাত্সরিক পারো উত্‍সব হয়েছে। তার নিদর্শন হিসেবে কিছু কাঠামো দেখলাম। গাড়িতেই সুখবর পেলাম। শ্যাম জাবেদ কে জানালো আমরা শুধু চেলালা গিরিপথ ই নয় সঙ্গে ভুটানের সব থেকে কঠিন হাটাপথ ও সুন্দর স্থান টাইগার নেস্ট এই টূর এ অতিরিক্ত গন্তব্য হিসেবে পাচ্ছি। তাহলে আজকেই আমাদের বেরতে হবে চেলালা গিরিপথ এর উদ্যেশে। এই একটি মাত্র স্থান যেখানে এখনো কিছু বরফ পেলেও পেতে পারি।

হোটেল ফুংসুম এ গাড়ি ঢুকতেই কোনরকমে ঘর দেখে নিয়ে , উচ্চতার ওষুধ যেমন কোকা-6 খেয়ে নিয়ে গরম জামা চাপিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আবার। চেলালা পাস এর উচ্চতা প্রায় 4000 মিটার। এটি ভুটান এর সর্বোচ্চ গিরিপথ যেখানে গাড়ি যেতে পারে। গরম জামা দরকার, সব সময় সঙ্গে নেবেন। কারণ এখানে যথেষ্ট ঠান্ডা ও সঙ্গে হু হু করে বয়ে চলা হওয়া।

রাস্থাতেই আমাদের বাম দিকে পারো বিমানবন্দর। এক মাত্র বিমানবন্দর, ভুটানে। পারো বিমানবন্দর পাখির চোখে দেখার জন্য একটি স্থান নির্ধারিত আছে। যেখানে আমরা নামতেই..... চাড়িদিকে পাহাড়। মাঝখানে উপত্তকায় ছবির মত বিমান নামার রাস্তা, সঙ্গে ভুটানী আদলে তৈরি যাত্রীপ্রতিখ্যালয় ও অফিস ঘর। এক দিক দিয়ে বয়ে চলেছে নদী। স্বপ্ন যেন শেষ হচ্ছে না। সোনালী রোদে দাঁড়িয়ে একের পর এক ছবি তুলেও শান্ত হয় না মন।

ঘণ্টা খানেক উঠেই এক দুবার যেন মাউন্ট লমোহরি দেখল কৌশিকী। গাড়ির গতির জন্য আমি দেখতে পাই নি। এই পর্বত শৃঙ্গ ভুটানের সর্বোচ্চ ও একমাত্র আমার পথে এই চেলালা থেকেই দেখা যায়। আর ক্ষণিক বাদে মনে হলো যেন সাদা সাদা কিছু একটা রাস্তার ধারে। আমি "বরফ" বলে চেচিয়ে উঠলাম। সিল্ক রুট এও সমান উত্‍সাহে চেচিয়ে উঠেছিলাম। আর কেউ দেখতে পেল না। উল্টে জাবেদ বললো থুতু ফেলা, কৌশিকীর কথায় আমি স্বপ্ন দেখছি। বার বার পার্থনা করতে লাগলাম, অন্তত আর একবার যেন দেখা মেলে। এপ্রিল মাসে বরফ দুস্প্রাপ্য। ঠান্ডা বাড়ছে। এক এক বাঁক ঘুরছে আর পাল্লা দিয়ে ঠান্ডা বাড়ছে। একটি বাঁক ঘুরতেই, একটু ওপরে তাল তাল বরফ!!!! এতটাও নয় যে দুপাশ সাদা হয়ে থাকবে, তবে ওপরে যেখানে সূর্য পৌছবে না, বেশ খানিকটা বরফ। এবার সবাই বিশ্বাস করলো। যাবার সময় দাড়ায় নি। সোজা উঠে গেলাম চেলালা। একে একে সব স্বপ্ন সামনে। হু হু করে হওয়া, আর প্রায় 4দিকে একে একে মাঠ তুলে অল্প বরফ ঢাকা পর্বতশৃঙ্গ। এত ঠান্ডা, আমি আর জাবেদ ছাড়া কারোর তেমন অভিজ্ঞতা নেই। বেশিখন দাঁড়াতে পারলাম না। ভাবলাম মাউন্ট লমোহরি দেখেছি, কিন্তু পরে বুঝেছি তিনি মেঘের আড়ালেই ছিলেন।

খিদে পাচ্ছে। রাজু ফোনে পারো তে একমাত্র বাঙালি হোটেল, হোটেল ড্রাগন এ ফোন করে খাবার অর্ডার দিয়ে দিল। গাড়ি আর বেশি এগোয় নি। একটি অংশ থেকে হা উপত্তকা দেখা যায়, দেখে নিলাম। ফিরতে থাকলাম। রাজুকে বলে দিয়েছিলাম, বরফ দেখলে দাঁড়াতে। যথারীতি বরফ সমৃধ্য অংশে এসে দাঁড়াল। সবাই একটু ওপরে উঠে বরফের সঙ্গে বন্ধুত্ত করতে গেলো। আমি ও আমার পরিবার নীচেই দাঁড়িয়ে। তাল তাল বরফ নিচে নামিয়ে আনলো জাবেদ , শুভদিপ, নবীন দা, শুভাশীষ দা রা। রাস্তার ওপরেই বরফ ছোড়াছুড়ি। আমার মেয়ে ও কৌশিকীর প্রথম বরফ দর্শন। মজাই আলাদা। নাহ, সিল্ক রুট বা কাশ্মীর এর ধারে কাছে নেই এ বরফ। কিন্তু দেখা তো দিয়েছেন। তাতেই খুশি সবাই।


পর্ব-৮

বরফ পর্ব মিটতেই শুরু পেটের আগুন জলা। প্রায় এক নিমিষেই নেমে এলাম পারো। ছুটেই ঢুকে পরলাম হোটেল ড্রাগন এ। বাঙালি রাধুনি। প্রায় বাঙালি খাওয়ার আর প্রায় বিকেল ৪ টে। একের পর এক প্লেট ফাঁকা। এই প্রথম তৃপ্তি করে খেলাম। পেট ভরে। খেয়ে বেরিয়ে আসতেই বৃষ্টি। এক পশলা দু পশলা, সঙ্গে ঘন মেঘের আনাগোনা। একটু দাঁড়িয়ে বৃষ্টি থামা অবধি অপেখ্যা। নারী বাহিনী ও শুভাশীষদা প্ল্যান করতে লাগলো কী কিনবে। ছোটো শহর কিন্তু দোকান খুব একটা কম নয়। সব থেকে সস্থা সূরা ও লজেন্স। কৌশিকী লজেন্স কিনতে থাকলো। দু একজন অন্য কিছু জিনিস এর দাম করেও ছেঁকা খেয়ে নিরস্থ হলো। ৭৫০ মিলি সূরার দাম ১৫০ টাকা হলে একটি ছোটো নেলপালিশ ২০০ টাকা।

ইতি মধ্যে ঘিরে থাকা পাহারগুলোর মাথায় মাথায় মেঘের আনাগোনা শুরু। চূড়ায় চূড়ায় শুরু তুষারপাত। একে একে সাদা হতে থাকলো ঘিরে থাকা চূড়াগুলি। অল্প বৃস্টি পরেই চলেছে। রাজু হোটেলে ঘুমাচ্ছিল, ফোন করে ডেকে আনলাম। শেষ আলোয় কিছু ছবি তুলেই গাড়িতে উঠে হোটেল। এর পর শুধুই রাতের খাবার ও ঘুম। চোখে পরের দিনের টাইগার নেস্ট।

 আজকের প্ল্যান ছিলো সকাল সকাল টাইগার নেস্ট এ যতটা পরাযায় উঠে, বিকেলে পারো শহর ঘুরবো, কিন্তু বিধি বাম। বেরতে একটু দেরি হয়ে গেল। ১০:৩০ নাগদ টাইগার নেস্ট যাত্রা যেখানে শুরু হয় সেই স্থানে পৌছালাম। টাইগার নেস্ট হলো একটি বৌদ্ধ মঠ, যেখানে বলা হয় গুরু রিংপচে ৩ বছর ৩ মাস ৩ দিন ৩ ঘণ্টা তপস্যা করে দেহত্যাগ করেন। ইনি ছিলেন ভুটানে তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের প্রথম প্রচারকও। তাই এটি খুব ই শুদ্ধ ও ভুটানীদের কাছে পবিত্রভূমি।

যাত্রা শুরু, হাতে সবার একটি করে লাঠি। ভাড়া নিতে হলো। প্রথম পিসামসই দাঁড়িয়ে গেলেন একটু এগিয়ে। দুপাশে জঙ্গল, মাঝে কাঁচা এবং মোটামুটি খাঁড়া পাথুরে ও মাটির রাস্তা। একদিকে খাদ। অন্য দিকে পাহাড়। মেয়ে ও কৌশিকী একটু উঠে দাঁড়িয়ে পরলো। নেমে আসবে। বাকি সদস্যদের মধ্যে শুভদিপ জাবেদ ও নবীনদা একটু দ্রুত এগোতে লাগলো। আমি শুভাশীষ দা ও পিসিমা পেছনে। অনেকটাই উঠলাম প্রায় ৩ km। এর পরে আমি আর পারলাম না। একটু বিশ্রাম নিয়ে নেমে এলাম। বড্ড খাঁড়া। উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। নিশ্বাস এ কষ্ঠ। আমি নেমে এলাম। শুভাশীষদা ও পিসি এগিয়ে
চললেন। নামার পথে এক কানাডা নিবাসীর সঙ্গে গল্প করতে করতে নামলাম। শুনলাম ওরা সকাল ৭ টায় ওঠা শুরু করে। এখন নামছে। নেমে এলাম।

প্রথম বিপদজনক ফোন এলো। জাবেদ জানালো আমার শ্যলক শুভদীপ ওদের থেকে একটু এগিয়ে গেছিলো। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কথা মত ওরা প্রায় সবাই প্রথম কফী শপ এ পৌছেছে। এখানেই যাত্রা শেষ করার কথা। এদিকে কেউ ওকে নামতেও দেখে নি। আমার উদ্যেগ বেড়ে কয়েকগুন।

পর্ব - ৯ ও শেষ ভাগ

পিসেমশাই কে কিছু জানান হলো না। কিন্তু তিনি কিছু একটা আঁচ করে উত্কণ্ঠায় ছোটাছুটি করতে থাকলেন। জাবেদ এর শরীর আর এগনোর অনুমতি দিচ্ছিল না। কিন্তু নবীনদাকে সঙ্গে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগোতে থাকলো। খুব কষ্ট, রাস্তা অনেক খাঁড়া। দম শেষ। কিন্তু ওরা এগিয়ে চলেছে।

শুভদীপকে উদ্ধার করতে। ওদের থেকে বেশি উদ্যেগ আমার। শুভদীপ মোবাইল নিয়ে যায় নি। রাস্তা মোটেও সরল নয়। বিপদের চিন্তা মাথায় ঘুরতে লাগলো। ভরসা জাবেদ। গুটি গুটি পায় ওরা দ্বিতীয় কফিশপ পৌছে গেল। সেখানেও নেই। উদ্যেগ ভিশন বেড়ে গেলো আমার। পাঠক নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমার ও পরিবারের কী অবস্থা হচ্ছে। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধে হয়। স্থানিয়দের কাছে শুনলাম আগের সপ্তাহে একটি দুর্ঘটনা ও তাতে জাপানী ভদ্রমহিলার মৃত্য সংবাদ। উদ্যেগে আমার শরীর খারাপ হতে থাকলো। জাবেদরা ওপরে উঠছে। এবারে শুধু সিঁড়ি, একবার উঠবে একবার নামবে।

প্রায় ৩ ঘণ্টা পরে জাবেদ সংবাদ দিল দেখতে পাওয়া গেছে। প্রায় মন্দিরে পৌছে দাঁড়িয়ে আছে। গেট বন্ধ ২টোয় খুলবে। তাও নিশ্চিত নয়। এতক্ষণ কষ্ট সহ্য করে ওপরে ওঠা জাবেদ ও নবীনদা ঠিক করল বাকিটা উঠেই ফিরবে। উঠতে লাগলো ও প্রায় আধঘণ্টা পরে জানালো, ওরা পৌছে গেছে। শুভদীপ এর সঙ্গে দেখা হয়েছে। দম ছেড়ে নিশ্বাস নিলাম। অতিরিক্ত উদ্যেগে আমার পেতে ব্যাথা হতে থাকলো। ওদের অনুরোধ করলাম একটু তাড়াতাড়িই নামতে। ওরা বৌদ্ধ মঠটি দেখে নিলো, ওখানে একটি পবিত্র জলধারা আছে, সেটি পান করলো। 

খিদে পেয়েছিল, রাজু গাড়ি নিয়ে একটু নিচে নেমে একটি দোকানে ঢুকল। ম্যাগী খেলাম, চা খেলাম। এখানেই প্রথম "আরা" আছে শুনলাম। "আরা" স্থানীয ভাবে চাল দিয়ে তৈরি ভুটানী মদ বা শরবত। এটি শহরের দোকানে খুজেছি, পাই নি, নিয়ে নিলাম। উঠে এলাম আগের জায়গায়। ইতিমধ্যে শুভাশীষদা নেমে এসেছে। জাবেদ রাও নামছে। যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, চারপাশ ঘন পাইন অরণ্য। কিছু বাড়ি অবশ্যই আছে। আর আছে দেশী বিদেশী ভ্রমণ প্রিয় মানুষ ও তাদের গাড়ি। এর পর শুধুই অপেখ্যা। উদ্যেগ অবসানে হটাত্‍ নির্গত আবেগের বহিরপ্রকশে পিসি পিসামসই, শুভাশীষদা একটু জোরেই মানে উচ্চ স্বরে শুভদীপকে বকাবকী করছিল। শান্তিপ্রিয় ভুটানী স্থানীযরা ছুটে এল, কোনও বিপদ হলো কিনা খবর নিতে। সব শুনে আমাদের আসস্থ করলো, এখানে বিপদ হয় না। প্রায় ৪:৩০ সূর্য ডোবার পর্যায়, জাবেদ ও দলবল নেমে এলো। ওরা ওপরে দুপুরের খাবার খেয়েছে। খাওয়া হলো না পিসি, পিসামশাই ও শুভাশীষদার। আমার পেটের ব্যাথা একটু বেড়েছে। গাড়ি বেশ জোরেই চলে হোটেলে ঢুকে গেলো। তিন শৃংগজয়ী জাবেদ, শুভাশীষ, নবীনদা। জীবনের একটি বড় পাওনা।

আজকেই শেষ রাত, সন্ধে হতেই আমি আর আমার মেয়ে বাদে সবাই বাজার গেলো। কিন্তু লজেন্স ও সূরা ছাড়া কেনার মত কিছুই প্রায় নেই, অন্তত পকেট বজায় রেখে। তাই নিয়ে ফিরে এলো। আজকে শ্যাম এসেছিল। গল্প হলো। শ্যাম হলো আমাদের ভুটান অধ্যায়ে সব কিছু ব্যবস্থা করে দেওয়া টূর ম্যানেজার। শেষ রাত অতিক্রান্ত হলো। আমার শরীর ধীরে ধীরে ঠিক হলো।

 রাত অতিক্রান্ত মন খারাপ, নামতে থাকলাম। পথে দুবার আবার অনুমতিপত্র দেখিয়ে বলে দিতে হলো আমরা চলে যাচ্ছি, শেষ বার জমা নিয়ে নিলো। হাতে সময় ছিলো। ফুণ্টসিলিং এ কুমির ও ঘড়িয়াল সংগ্রহশালা দেখে নিলাম। আমাদের আজকে ট্রেন নয়, আমরা এনজেপি যাব, ডুয়ার্স ছিড়ে। প্রায় ৭ ঘণ্টা গাড়িতে চড়ে নেমে এলাম হাসিমারা, জাবেদ ও নবীনদা ফিরে গেলো। ওদের আজকেই ট্রেন। আমরা চললাম ডুয়ার্স ভেদ করে নিউ জলপাইগুড়ি। চারিদিকে ঝিঝিপোকার শব্দ। গাড়ি প্রচণ্ড গতিতে ছুটেছে। আগে শুনেছিলাম বাঘপুল হয়ে ডুয়ার্স গামী রাস্তা খুব ই ভয়ংকর ছিলো। এখন দেখলাম বেশ ভালো।

মাঝে ৩ বার দাঁরাতে হলো। ছবি তুললাম। তবে এই অল্প সময়, কোনও বন্য এসে দেখা করেনি। রাজু প্রায় ১১ ঘন্টার দখল নিতে না পেরে মাঝে মধ্যে রাস্তায় বসে পড়ছিল। মাঝে মধ্যে দুপাশে ঘন জঙ্গল, মাঝে মধ্যে বসতি। একে একে তোর্সআ , ডাইনা, তিস্তা ও বহু নাম না জানা নদী, খাল পেরিয়ে এলাম।

একে একে লাটাগুড়ি, মালবাজার পেরিয়ে প্রায় ৭:৩০ মনে ১১ ঘন্টার যাত্রা শেষ হলো এনজেপি তে। আমি আগে থেকে স্টেশনএ dormitory ভাড়া করে রেখেছিলাম। irctc এখন PNR নাম্বার দিয়ে ঘর ভাড়া করতে দেয় আগে থেকে। রাতে কোনরকম কিছু খেয়েই বিশ্রাম নিলাম। ভোর হতে দেরি নেই। ভোরেই উঠে পরলাম এনজেপি-হাওড়া শতাব্দী। এখনো ঘোর কাটে নি। ৫ টা দিন যেন স্বপ্ন দেখেছি। ছবির মত শহর ও ততোধিক পরিষ্কার। মানুষরাও খুব ভদ্র ভালো সরল।

















[শেষ]

কয়েকটি কথা:
১। কখনোই দেশটিকে ভারত ভাববেন না, রাজাকে অসন্মান করবেন না, স্থানিয়দের কাছে রাজা ভগবান।
২। যেখানে সেখানে নোংরা করবেন না, আবর্জনা নির্দিস্ট অঞ্চলে ফেলুন।
৩। চিত্‍কার চেচামেচি করবেন না। ভুটানীদের সন্মান দিন, আপনি ওদের কাছে ভগবান হয়ে থাকবেন। ওরা খুব হেল্পফুল। 
৪। বাগ ভরে শপিং করতে গেলে পকেট ভরে টাকা নিয়ে যাবেন।
৫। ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট ছাড়া যেকোনো ভারতীয় মুদ্রা (কয়েন নয়) ওখানে চলবে।
৬। নিয়ম অনুসারে আপনি প্রতিজন হিসেবে ৫ লিটার পর্যন্ত সূরা সঙ্গে নিয়ে ফিরতে পারেন, তবে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ, সহজে কিনতে পারবেন না।
৭। ফুণ্টসিলিং এ অনুমতি পাওয়া যায়, তবে কলকাতার দমদম থেকে অগ্রিম নিয়ে নিলে একটি দিন নষ্ট হয় না।

মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

Bakreswar - Tarapith - Nalhati- Santiniketan Tour plan.


Hello Friends,


Here I have now the entire details of Rainbow Travels tour plan that I promised to say here.

Date: 19-20-21 Sept 2014 (Friday to Sunday)

Tour description:

Day1: Pickup at Barasat, 3 No Gate, Birati, Madhyamgram (Can change based on request towards Salt Lake) early morning.

On road breakfast and lunch.

Destination : Bakreswar->Tarapith (Night stay and dinner here)

Day 2: Leaving Tarapith by 10 AM (after offering Puja if you want to and breakfast and tea.)-> Nalhateswari (New idea) -> Bhadrapur Ma Kali( a 800 years old temple) -> Santiniketan.
Night stay at Santiniketan. Tribal village (Khoai river).
Lunch on road and also tiffin.

Day 3: Santiniketan Campus (4 am), Tribal village (khoai river), and back.
Drop at same points where picked.

Travel by Car: AC Car accommodation.

Room: Non AC and AC both on your preference.

Costing: Rs. 4200 for Non AC room holder and Rs. 4700 for AC room holder.

Coupon code: OSPNIL01TRP

Coupon discount: flat rs. 200 for AC and non-AC

Trying hard to stay day 2 at tribal village at Khoai.

Contact Debobrata Roy: 7278023335 (Place your coupon code to avail Rupees 200 flat discount while phoning)

Also you can comment here to know details.

রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

Puri - Konark - Puri - Place of Jagannath - Subhadra- Balaram

Friends,

I am back again. No this time I will not write something related to West Bengal. Promise, I will start writing on beaches of West Bengal. Now let me write something about Puri because today is the most populous day for PURI. Today Lord Jagannath will leave Puri , his own home to his aunty's home via chariots. He will accompany with his brother Lord Balarama and sister goddesses Subhadra.

 Hey this is not a religious place only. You know why? This is a place which have a long virgin beach. Lord Jagannath's temple is very close to Bay of Bengal here. So why do you like to leave a chance to meet Lord Jagannath with a beach? Also you can have a smell of 1000 Century AD. Want to test 1st century BC? Well plan for that too.

Lets have some images now:



You can reach Puri from any major city of India. You can reach here via BHU or Kolkata Airport as well. 
Let me tell you we select to reach Puri via Howrah - Puri express or using Duranta or Satabdi Express from Howrah or Sealdha station. You have to book your ticket in 2 advance of minimum one and half month. Here you will find a good rush always. So it is best to have your ticket as soon as counter opens in 2 month advance.

You can select this place to tour as week end but i prefer it as a relax tour. Select any 5 days frm you busy schedule and lets move.

I am going again on 2nd Aug 2014 to 7th Aug 2014. Want to go with me? Knock me.



















A place where history meets beauty.