Amazon

মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১৬

পোনা দার পাহাড় (West Sikkim with Ponada)



প্রথম ভাগ

পোনা দা হটাত্‍ ঠিক করলেন সিক্কিম যাবেন। জীবনে কোনও দিন ধাপার মাঠ ছাড়া কোনও পাহাড় এর মুখ দর্শন করেন নি। 10 টা 5 টা অফিস করে ছেলে পড়িয়ে বউ এর সেবা করে যেটুকু সময় পান এদিক উদিক উঁকি ঝুঁকি মারেন বোকা বাক্সে। তাতেও বেশিরভাগ সময় পারিবারিক মনোরঞ্জন ও সম্পত্তি ভাগাভাগি ততসহ কয়েকটি লোকের 2-3 বার বিবাহ দেখে খুব উত্সাহিত হলেও বউ এর বাসন মাজার ডাকে আবার সেই তিমিরে। এ হ্যান লোক হটাত্‍ শিলিগুড়ি কাজ পেতেই বসের পায়ে তেল দিয়ে সিক্কিম ঘোরা বগিয়ে নিয়েছেন। ছেলের বই তে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এভারেস্ট এর ছবি দেখে মনে মনে ঠিক করে নেন যা থাকে কপালে, দেখেই আসবো। বউ এর পার্মিশন মেলা বসের থেকেও কঠিন। সামান্য কিছু ঘুষ দিতেই হটাত্‍ রাজি। এযেন হটাত্‍ মেঘ বিহীন বৃষ্ঠী।
শিলিগুড়ি কাজ মিটিয়ে ভ্রমণ কারি দল জুটিয়ে উঠেত বসলেন গাড়িতে। একদম সামনের সীট বাগিয়ে নিলেন। কিন্তু সমস্যা শুরু সেবক আসতেই। গাড়ি ঘুরছে আর উঠছে, ঘুরছে আর উঠছে। একবার কান বন্ধ তো একবার মাথা ঘুরছে। হটাত্‍ সামনে ধসের হাত পেরিয়ে সদ্য তৈরি রাস্তা। পোনা দার মাথা ঘুরে গেলো। হাতের কাছে যা পেলেন চেপে ধরলেন। গাড়ি ভোওওও উঠেই স্তব্ধ। পোনাদা গাড়ির গিয়ার চেপে ধরে খিমচে দিয়েছেন। হাউ মাউ করে পেছনের গাড়ি থেকে নেতা তেরে এলেন। মারবেন নাকি দাদা। এত গুলো লোক। পোনাদার সেদিকেহুস নেই। ধরে বেধে প্রায় গাড়ির পেছনে তোলা হলো। এক ফিচেল ছেলে জলের সাথে তেতো কী খাইয়ে দিয়েছিলো। আর মাথা কাজ করছে না। শুধু মাঝে মধ্যে মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে গাড়ি দাঁড় করাও। ছোট বাইরে পেয়েছে। এর চোটে গাড়ির বাকিরা বিরক্ত। কী করবেন। নগদ 10000 হাজার দিয়েছেন । উনি এখন মালিক।
 
যাইহোক গাড়ি অনেক কষ্ঠে অনেক বিপত্তি ও ছোট বাইরে পেরিয়ে সিক্কিম ঢোকার মুখে। পুলিস বলে আইডি দেখাও। পোনাদা দেখাবে না। কারন? ভারতীয় সংবিধান এ ভারতীয়দের যেখানে খুশি বিনা বাধায় যাওয়া ও কাজ করার অধিকার আছে। তাই ওটি থাকলেও দেখাবেন না। বোঝাও ঠেলা। অনেক কষ্ঠে ওনাকে বোঝানো হলো আপনাকে ভারতীয় প্রমান দিতে হবে নাহলে দরজায় বসিয়ে রাখা হবে। আইডি কার্ড তো বেরলো। কিন্তু সদ্য ভোটে পাড়ার দাদরা এটি জিংমায় রেখেছিলো ও ছবিটি যারপরনাই ঘষে দিয়েছে। পুলিস তো আর পাড়ার দাদাদের কথা জানে না। ওরা মানবে না। শেষে এক ভদ্রলোক কিসব বোঝালেন ও তারা ছেড়ে দিলো। পোনাদা ভাবলেন তাহলে এখানেও পাড়ার দাদা আছে।
প্রথম পৌছলেন ঋণচেনপঙ। কী ঠান্ডা। শিলিগুড়ির গরমেই মোটা লেপের মত সোয়েটার এ বেস গরম তখন লাগলেও এখন তো বৌয়ের ধমকের থেকেও কর্কশ ঠান্ডা হাড়মাস জলিয়ে দিলো। নামতেই দেখে হোটেলে ইয়া বড় দুটো কুকুর। একটাকে তো বাবার জন্মেও দেখেন নি। এক আওয়াজ এই পিলে হাতে উঠে আসার যোগাড়। এদিকে চারিদিকে ঘূত ঘুটে অন্ধকার। বউ টা একবার ফোনে খেয়েছ কিনা জেনে সেই যে ডুব দিয়েছে ব্যাস। ছেলে কী করে কে জানে।





দ্বিতীয় ভাগ

রাতে পোনাদা খুব বেশি কিছু খেলেন না। ভীষন ঠান্ডা। মরেই যাবেন বোধয়। কলকাতায় কোনদিন এরকম লাগে নি। একদম ফ্রীজ এর মধ্যে। সোয়েটার খুলতেই পারলেন না। ফিচেল ছেলেটা এক ঘরে পোনাদার সঙ্গে। আবার তেতো জল খাইয়ে দিলো। এতক্ষণ পরে নাম জেনেছেন ফিচেলটার। সমরেশ। সবাই সমু বলে। মাঝ রাত। হটাত্‍ পোনাদা গর্জে উঠলেন "কাকলী ফ্রীজ বন্ধ করো, ঠান্ডা লাগছে।"
সমরেশ ধরমরিয়ে উঠে বসে : "কাকলী এখানেও?"
বলে রাখি পোনাদার স্ত্রী ও সমু এর প্রেমিকা দুজনের নাম ই কাকলী। দুজনেই তেতো জলের মহিমায় কাকলী নামক একজন কে স্মরণ করছেন। একজন সারাজীবন না করতে পারা হুকুম ও অন্যজন যার ঘন ঘন ফোনের হাত থেকে পালিয়ে কিছুদিন নিরিবিলিতে এসেছে তাকে স্মরন করে আত্কে ওঠা আর কি।
শীতের জালায় ঘুম পাতলা হয়। পাঠক কলকাতার ঘুম পাড়ানি শীত ভেবে গুলবেন না। ঘণ্টা খানেক পর, হটাত্‍ পোনাদা "আরে আরে পরে গেলাম পরে গেলাম তো। বাঁচাওওও"।
"ও দাদা ছারুন, মরে গেলাম মরে গেলাম"। সমু এর আর্ত চিত্কার। পোনাদা সমু এর গলা বা অন্য কিছু এমন জোরে চেপে ধরেছিলেন মরেই যাচ্ছিল বেচারা। নাহ আর সমু কোনরকম সুযোগ নেয় নি। সজজা সোফায় বাকি রাত। বেশি ঘুম হয় নি। ভোরের আলো ফুটেই সোনালী কাঞ্চন পুরো পরিবার সমেত হাজির। জানলার পর্দা সরিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ সমু সোজা ক্যামেরা বার করেই ছবি তুলছে। পোনাদা কে ডাকল। একবার নড়েই স্থির। আবার ডাকল। "দাদা এই জিনিস বেশি দেখতে পাবেন না। 10000 খরচ কি ঘুমনোর জন্য করেছেন নাকি?"টাকার গন্ধে পোনাদা লাফিয়ে উঠে বসলেন। উঠেই কাঞ্চন। আর পোনাদার বড় হা মুখ। কোনটা বেশি দর্শনীয় সমু বুঝতে পারছিল না। যাই হোক চমক আরও আছে। সামনে লনে কাল রাতের কুয়াশা জমে বরফ। সে এক সর্গীয় অনুভুতি। দূরে ভেসে আসছে প্যাগোডা থেকে ঘণ্টার শব্দ আর কচিকাঁচা কিছু গলার শব্দ। পোনাদা বাথরূম এ ঢুকলেন ও ছিটকে বেরিয়ে এলেন। জলের সামান্য কনা হাতে লাগতেই হাতটাই বরফ হতে চলেছে। কি বিপদ। এদিকে প্রাতকৃত্য সমপন্য না করলেই নয়। সমু এসে জল গরম করার মেশিন ছেড়ে সে যাত্রায় বাচাল।
হাতমুখ ধুয়ে গরম ঠান্ডা মেশানো খাবার খেয়ে, কম করে 4 টি ডিম গলোধগরন করে গাড়িতে উঠতে যেতেই বিপদ। আজকে পেছনের সিট এ ধরে বেধে ঢুকিয়ে দিলো।



 তৃতীয় ভাগ

পোনাদা পেছনে উঠবেই না। ড্রাইভার ও সামনে কেনো মাঝেও নেবে না। সমু অনেক বোঝানোর পর উঠে বসলেন। তবে আজকে আবিষ্কার করেছেন তেতো জল খেতে মোটেই খারাপ না। এটি বিলাতী মদ। বোধয় রাম না শ্যাম কী একটা নাম। সমু সেটি বোতলে ভরে পেছনের দিকে উঠতেই পোনাদা চলে এলেন।
গাড়ি কালুক হয়ে হিলে যাবে। মাঝে একটি সুন্দর ঝর্ণা দেখবেন ও শেষে হিলে। যদি সময় থাকে তো হেটে বার্সেয়। ঠিক হ্যায় চলো বলে শুক শুক করে তেতো জলের গন্ধের সাথে পেছনের সীট এ যাত্রা শুরু। পেছনের সীট এ মাঝবয়েশি এক মহিলাও বসে আছেন। তার ভয় ডর নেই। আর আছেন এক দাদু। অনেক বয়েস। পাহাড়ের নেশায় চলে এসেছেন। পোনাদা ভাবলেন সখ বটে বলিহারী। কোথায় এই বয়েসে নাতি নাতনী নিয়ে খেলবে তা না দাদু চলে এসেছেন কী বিকট পাহাড়ে। দাদু কী? না তার দাদু হবেন না। কাকাই হবেন। বাবা বেঁচে থাকলে এনার থেকে বেশি বয়েস হতো নিশ্চয়।
ভয়ে সমু আজকে পোনাদার পাশে বসে নি। মাঝ বয়েসী ভদ্রমহিলার পাশেই বসেছেন। তবে ছোওয়া এড়িয়ে যত ভদ্রভাবে বসা যায়। একদম সামনে আজকে কম বয়েসী এক মেয়ে হাতে য়া বড় মোবাইল নিয়ে বসা ইস্তক খুচ খাচ করে ছবি তুলেই চলেছে। গাছের ডাল হক বা বাঁশের ঝাড়। বিরাম নেই কিছুতেই। গাড়ি আজকে আরও ভয়ানক রাস্তায়। কী বিপদ। হাত পা ব্যবহার করে ভয় কাটানোর উপায় নেই। তাই যতদূর সম্ভব নিজের পায়ে খামচে ভয় দূর করলেন। প্রথম থামল হনুমানটপ ঝর্ণার সামনে। জীবনে ঝর্ণা দেখেন নি। আসার সময় পাহাড়ের গায়ের জলের কিছু ছিটে লেগেছিলো। কিন্তু এযে বেশ জোরে অনেক উঁচু থেকে অনেক জল। খবরের কাগজে পড়েছেন উত্তরাখণ্ড না কোথায় জলের তোরে সব ভেসে গেছে। যদি এখানেও হয়। কিছুতেই গাড়ি থেকে নামবেন না। সমু জোর করে নেমে সোজা উঁচু এক যায়গায় প্রায় টানতে টানতে নিয়ে গেলো। সামনে আরও ভয়ানক জোরে জলের ধারা। উঁচুমত স্থানে উঠে আর মুখ দিয়ে গঙানি জাতীয় একটা শব্দ বেরতে লাগলো। "ক ক কুক কুক"।
মোটা মত চন্দন কাকু (এনার ও বেশ বয়েস) এগিয়ে এসে ভুরি দুলিয়ে পাশে দাড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন "কী হলো দাদা"। "ক ক কুক কুক কাকলী আমি বাড়ি যাব"। "কাকলী কে?""ক ক কুক কুক কাকলী আমি বাড়ি যাব"। "আরে ধুর মশাই, আমি এত বড় পেট নিয়ে কোথায় চলে এলাম আর আপনি বাড়ি যাবেন কেনো? কিসের ভয়? আর মশাই.... কাকলী টা কে? যাওয়া টাওয়া হয় নাকি? বাড়িত শুনলাম বৌবাজার"। "আরে বলেন কী? কাকলী আমার বউ" এতখনে গঙানি থামিয়ে কথা বললেন। "আর কুক টা কে?""আরে ওটা ভয়ের সময় আমি একটু তুতলে যাই"। "সমু এই কুক কে ধরে সোজা গাড়িতে চালান করো" বলে চন্দনদা নিচে নেমে গেলেন।
 
অন্ধ লোকেও এর থেকে ভালো চলতে পারে। পোনাদা সমুর হাত খামচে নিচে নেমে এলেন। ভাগ্গি ভালো গলা টিপে ধরেন নি। গাড়ি চলতে লাগলো। একটু একটু খিদে পাচ্ছে। একটু দূরে বৌদ্ধ মন্দিরে দাঁড়িয়ে গেলো। এবারও উঠতে হবে তবে সামান্য। সঙ্গের কাকু কাকিমা বয়েসীরা গট গট করে উঠে গেলো। কেউ রবীর তো কেউ সমুর হাত ধরে। বুকে বল নিয়ে পোনাদাও উঠলেন। উঠেই দেখেন মোনা কাকিমা, যিনি তার সঙ্গে বসা মোহন কাকুর স্ত্রী, ধপাস। নির্ঘাত পা ফসকে। ভেবেছিলেন। মনে মনে বলেওছিলেন। কী দরকার এত উঁচুতে এত কস্ট করা। নির্ঘাত সুখের সংসারে ভুতে কিলিয়েছে। রবি গৌতম সমু ধরে তুলে দাঁড় করাতেই কাকিমা একদম সোজা গট গট করে হেটে মন্দির দেখে গাড়িতে নেমে এলেন। পোনাদা বুকে বল পেলেন। এত বয়েসী কাকিমা যদি পড়ে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ান তো তিনি তো যুবক।
পোনাদা নেমে এলেন। খুব একটা লোকের সঙ্গে কথা বলতে সচ্ছন্দ না হলেও লজ্জা কাটিয়ে মোনা কাকিমা কে জিজ্ঞাসা করেই ফেললেন। "আমার কাছে হোমিও ওষুধ আছে, খাবেন"। "দাও যা আছে দাও তবে আমি সুস্থ"---মোনা কাকিমা বললেন।
পোনাদার হোমিও বাক্স সঙ্গে নিয়েছিলেন। খুব ছোট্ট। অনেকে কৌতুহল হলেও এই আজিব জীবকে কেউ ওটা কী জিজ্ঞাসা করে নি। বাক্স খুলতেই সারা পৃথিবীর ওষুধ বেরিয়ে এলো। তার মধ্যে "মাথা ঘোরানোর ঔষধ" লেখা ছোট্ট সিসি থেকে 5-6 দানা সরাসরি মোনা কাকিমার মুখে ফেলে দিয়ে ধন্যবাদ শব্দ শোনার আগেই লজ্জা লজ্জা মুখে এসে নিজের গাড়িতে বসলেন। পেট মোটা চন্দন কাকু নাম দিলেন "কুক বক্স" সংখেপে "কুক"।
গাড়ি চললো। কিছুখন বাদে হিলে না হিল্লে জানেন না তবে একটা যায়গায় দাড়াতেই লম্বা লম্বা বরফ কুচি। আজ সকালেই দর্শন হলেও এখানে আরও বেশি। একটা নদীর জল পুরো জমে বরফ হতে হতে হয় নি। এখান থেকে হেটেই বার্সে যাওয়া যায়। কিন্তু বেলা বেশি হওয়াতে সমু রবী গৌতম কেউ গেলো না। "রডদেংদ্রন এর ওয়াইন নেবেন নাকি দাদা, খেলেই বাত বেদনা দূর হয়ে যাবে"। সমু বললো। বাতের কষ্টে কয়েকদিন ভুগেছেন। তাই একটু দাম করে কিনতে গেলেন।
"কিতনা টাকা দাম ভাইয়া" "বাবুজি নিবেন? 700 টাকা বোতল"। "কী যে বলো, 50 টাকা মে হোগা?" পোনাদা নিউ মার্কেট এর স্কিল প্রয়োগ করলেন। ভূটিয়া স্থানীয় মহিলাটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো "500 , নেহী বাবুজি, 700 নিচে হবে না"। "তাহলে দাও দাও 100 দিচ্ছি"। "না বাবুজি"। নিউ মার্কেট এর স্কিল দার্জিলিং এ কাজ করলেও এখানে করে না সেটা সমু বুঝিয়ে বলতেই পোনাদা 700 টাকা দিয়ে মহার্ঘ ওয়াইন কেনা থেকে বিরত থাকলেন।








 চতুর্থ ভাগ

সেরকম কিছু দেখার নেই। অনেক উঁচু আর ঠান্ডা। আসে পাশে কিছু বাড়ি ঘর বন জঙ্গলে ভরা তবুও পোনাদার মনে হলো ঠিক যেনো টাকার ব্যবহার হচ্ছে না। এদিকে মোহন কাকুর পেটে বোধয় ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। মাঝে মধ্যেই পেটে হাত বোলাচ্ছেন। তবে ঠিক খিদে না ছোটো বাইরে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সমু গৌতম ইয়া বড় সব ক্যামেরা নিয়ে পোকা মাকড় থেকে শুরু কোরে নাকে সিকনি পুচকে ভূটিয়া বাচ্চার ছবিও তুলে ফেলছে। আরে ভাই পোকা কী কলকাতায় কম নাকি? এদের নির্ঘাত তেতো জল খেয়ে খেয়ে মাথা বিগরে গেছে। নাহলে ওই ভূটিয়ার ছবি তুলতে এত উঁচুতে? আর এই ভূটিয়া বাচ্চা গুলো কী সুন্দর সাইকেল চালাচ্ছে, এদিকে পোনাদার দম বেরিয়ে আসছে হাঁটতে। এদের মনে মনে পেন্নাম ঠুকে এক কাপ চা খেয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বসলেন। ঘড়িতে 2 তো বাজে। আজকে খাবে না নাকি রে বাবা। কেউ আবার বাঁশ গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে এলো দেখছি। এতো বসের কাছে বাঁশ খেয়ে পোনাদা বাঁশ একদম পছন্দ করেন না।
ভুরি দুলিয়ে চন্দন কাকু এবার হটাত্‍ পোনাদার পাশে। আর মাঝ বয়েশি সেই ভদ্রমহিলা যার নাম জানা হয় নি। তিনি অন্য গাড়িতে। নির্ঘাত পোনাদার হাতে দুর্ঘটনার শিকার হতে চান নি।
চন্দন কাকু এসেই একটা সিগারেট ধরিয়ে সুখটান দিলেন। পোনাদা 4 টাকার সিগারেট পাশে বসে ধোয়া খেয়েছেন বটে তবে কিনে কোনদিন খান নি। কিনতে গেলেই কাকলি মুখ ঝামটা কানে বাজে। "4 টাকা কী তোমার বাবা দেবে?"নিজের টাকা শুধু মাত্র একদিন ই থাকে নিজের। পরের দিন থেকে কাকলির। তাই সেখান থেকে 4 টাকা খরচ কোনদিন করেন নি। তবে কেউ দিলে অনভস্থ হাতে সুখটান দিতে পিছপা হন না। চন্দনকাকু একটা দিলেন। সিক্কিম এ গাড়িতে বা রাস্তায় সিগারেট খাওয়া নিষেধ। লুকিয়ে গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে বা থামা অবস্থায় বসে খাওয়া বাঙালি দের সিগারেট কাঙালি পনার একমাত্র উপায়।
গড়ি চলতে লাগলো। ফেরার পালা। একি রাস্তায় ফেরা। তাই এবার একটু ভয় কম। তবে অনেকদিন পর ধূমপান করায় মাথা ঝিমঝিম করছে। হোটেলে ফিরতেই এতক্ষণ চেপে থাকা খিদে জেগে উঠল। সন্ধে নেমে এসেছে। এখনো দুপুরের খাবার পেটে পরে নি। এদিকে সেরকম ঠান্ডা। কে কোথায় আছে না দেখেই ছুটলেন খাবার ঘরে। দুপুরের খাবার গরম করে দিয়ে দিলেন হোটেল থেকে। খেয়ে সোজা লেপের তলায়। সমু একবার ডাক দিয়েছিলো। আসুন হই হুল্লোড় হবে। ধূস। এই সব হুজুগে পাগলদের সাথে কেউ হই হই করে? ওই ভূরিয়লা কাকু তখন সিগারেট দিয়েছিলেন। এখন যদি তার থেকে খেতে চায়? একে সঙ্গে নেই , লজ্জায় নিচে নেমে কিনতে হবে দিগুন দামে তায় কত খরচ হবে ঠিক নেই। এর থেকে ঘরে লেপের তলায় গরম হওয়ার চেষ্টা। রাতে কীছু খেলেন না তেমন। গোটা 5 ডিম খেয়ে শুয়ে পরলেন।
নাহ, এদিন রাতে পোনাদা কোনও ঝামেলা করেন নি। বিশেষ ঘুম হয় নি। ঠান্ডা আরও বেশি।
পরদিন সকাল সকাল তৈরি। ব্যাগ গোছাতে হয়েছে। আজকে রাতে পেলিং থাকবেন। ওখানে নাকি আরও ঠান্ডা। বলে কী রে। একবার মনে হলো পোনাদা কিছু বিলাতী কিনবেন। একটু সমুকে খাওয়ান দরকার। আবার ভাবলেন ওদের অনেক আছে । একটা দুটো ছোটো খেলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।
এক গাড়িতে আবার পোনাদা। পাশে চন্দন কাকু। পোনাদার মনে ভয়। যদি সিগারেট চান। নাহ উল্টে গাড়িতে ওঠার আগে আরও একটা দিলেন। লজ্জা লজ্জা করে পান ও করে নিলেন। নির্ঘাত লোকটা পোনাদা কে দু কান কাটা ভাবছেন।
গাড়ি প্রথম দাঁড়াল হি হি করে কাপার যায়গা হি ওয়াটার পার্ক এ । অপূর্ব দৃশ্য। একটি নদী বয়ে এসেছে। তাকে ঘিরেই পার্ক। পোনাদার মুখ প্রথম দিনের মত বড় সড় হা হয়ে খুলে রইল। গৌতম এসে ধাক্কা দিয়ে সম্বিত ফেরাল। "পোনাদা আজকে পেটে ফেললে পয়সা দিতে হবে, 100 করে ধরেছি আপনার"। কী বেয়াক্কেলে ছেলে রে ভাই। সবে রস গন্ধ নিছিলেন সঙ্গে সঙ্গে 100 টাকার খোঁজ? বেজার মুখে 100 টাকা দিয়ে দিলেন।
গাড়ি আবার চলতে চলতে থামল একটা সেতুর সামনে। এটা নাকি ঝুলে রয়েছে। খুলে পরবে না তো? কী বিপদ। মোনা কাকিমা সমু গৌতম পুটির মার মত দেখতে ভদ্র মহিলা মোহন কাকু সবাই দৌড়ে চলে গেলেন। আর সেই ছুকরি। য়া বড় মোবাইল থেকে নেমে ইস্তক ছবি তুলেই চলেছে।
মোল্লা পাড়ার রহিম মোল্লা যে পুরো পরিবার নিয়ে এসেছে সেটা আজকে পোনাদা খেয়াল করলেন। "আরে রহীম যে" । "এই যে দাদা, হি হি হি, কেমন আছেন। কালকে থেকে দেখছি আপনি আমায় চিনতে পারেন নি"। "আর বলো না , খুব ভয়ে ছিলাম"। "আরে দাদা এটা তো আমি ব্যবস্থা করেছি, কী হচ্ছিল বলবেন তো"। "ওও তুমিই আচ্ছা, না এখন ঠিক আছি"। বলেই পোনাদা এগিয়ে ভয়ে ভয়ে ব্রিজ এ উঠলেন। উঠতেই অন্য দিকে একটা গাড়ি ও উঠল। ব্রিজ বেশ দুলে উঠল। বাবা গো কাকলি গো বাড়ি যাব বলে উল্টো দিকে দৌড়ে চলে এলেন পোনা দা। সেই সমু আর আজকে রহিম এসে প্রায় পাজকলা করে অন্য পাশে নিয়ে গেলো। রহিম কেক টেক খাওয়াল কফি খাওয়াল। কিন্তু মোহন কাকু যে কখন বড় বাইরের সঙ্গে বন্ধু হয়ে গেছেন কেউ খেয়াল করে নি। খেয়াল পরলো গাড়িতে উঠতে গিয়ে খুজে না পেয়ে। খুজে খুজে পাওয়া গেলো টয়লেট এর সামনে। মোনা কাকিমা দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন।








পঞ্চম ভাগ
ধুস ধুস, এক খানা ব্রিজ দেখতে কেউ এত দূর আসে? এত ঠান্ডা, তায় এত উঁচু। ভাগ্গিস পেরিয়ে এসেছেন। যদি ব্রিজ এর সঙ্গে খুলে ঝুলতেন? পোনা দা খুশি নয়। এদিকে পৃথিবীর সর্বসুখ অর্জন করে মোহন কাকু বেজার মুখে গাড়িতে উঠেই ঘোষণা করলেন "যদিও আজকে আমার পেট আমার সঙ্গে নেই, যদিও বেশিরভাগ সময় আমি টয়লেট এর আসে পাশেই ঘুরবো, তবে রহিম যদি বিকেলে মুরগির রোস্ট খাওয়ায় , তাতে সব থেকে বড় পিস টা আমিই খাব। " পোনাদার খাবারের খবরে মন খুশ। কিন্তু... রহিম আবার বেশি টাকা চেয়ে বসবে না তো? আসা ইস্তক অনেক কিছু "প্যাকেজ এ নেই" বলে এক্সট্রা হাতিয়েছে গৌতম রা। এক ছিপি বিলাতীর দাম নিয়েছে 100 টাকা। এবার টাকা চাইলে যতই লোভ হোক পোনাদা খাবেন না। এই বুড়ো মোহনকাকু নির্ঘাত বড় পিস টা পুরো খাবেন না। ওনার সামনে ঘুর ঘুর করলে এটো করার আগে নির্ঘাত "নাও একটু খাও" বলবেন ই।
মনের মধ্যে একরাশ চিন্তা করতে করতে গাড়ি দাঁড়াল উত্তরে। এটা উত্তর দিক? তাহলে এতক্ষণ কী পাতালে ছিলাম? ঘুরতে তো এসেছেন পশ্চিম, তাহলে উত্তর কেনো? "আরে ধুর কুক বাবু, এই জায়গার নাম উত্তুরে" চন্দন কাকুর কথায় সম্বিত ফিরলো। এ আরও বিরক্তিকর। কিছুই নেই। আগে একবার গাড়ি দাঁড় করিয়ে কী একটা ভলি না ব্যালি কী সব দেখিয়েছিল ড্রাইভার সাহেব। ওই লম্বা বড় মোবাইল হাতে মেয়েটির আবদারে গৌতম আবার পানোরমিক ছবি না কী সব তুলে নিজেকে কেউকেটা ভাবছিলো। সেতো এর থেকে ভালো। উঁচু উঁচু পাহাড়। একজন লম্বা হাত বার করে দেখালো ওই দিকে নেপাল। তাকিয়ে দেখলেন একটা উঁচু পাহাড় ব্যাস।
আর একটা টায়টনিক এর মত দেখতে হোটেল রয়েছে। আরে এতো আমাদের পাশের পারায় পুজোর মণ্ডপের থেকে বাজে দেখতে। সেখানে তাও "এত্ত বড় মিথ্যা" বলে টোলে অনেক কোচি কাঁচাদের ভিড় করিয়েছিল। সেই টায়টনিক এর মন্ডপে পাশের গলির টোপার মায়েদের আগমন হয়েছিলো। এখানে সেসব কিছু নেই। যত্ত সব বড়লোকেদের আজব কারবার। এর মধ্যে একজন শান্ত ছেলে আছে। সবেতেই হাঁ তে হাঁ মেলায়। প্রচুর পয়সা। বহুজাতিক কোম্পানীতে কাজ করে। বাবা মাযের একমাত্র সন্তান। নাম বোধয় হরিমোহন। দেখি ওর থেকে আজকে বড় বড় ধূমপান পাওয়া যায় নাকি। যেরকম ভাবা সেরকম কাজ। হরিমোহন মুখে আগুন জলাতেই পোনাদা হাজির। "খান"---মেঘ না চাইতেই জল। হরি একটা এগিয়ে দিলো। সঙ্গে ভুরি দুলিয়ে চন্দন কাকু মোহন কাকুরাও আছেন। সবাই একসঙ্গে বসে সব কাজ করেন। কোনও লাজ লজ্জা নেই। এটাই ভালো।
বড় ক্যামেরা গুলো এতেই কী সব হাতী ঘোড়া ছবি তুলেই চলেছেপোনাদার চোখ ই ক্যামেরা।
গাড়ি এবার চালু হতেই পেটে ছুঁচো দৌড় শুরু হলো। কিছু বললেন না। গাড়ি আর দাঁড়ায় নি। সোজা পেলিং। এখানে নাকি হেলিপ্যাড আছে। হেলিকপ্টার নামে। দেখতে পাবেন কিনা জানেন না।
ঠান্ডা তার চরম সীমায় পৌছে গেছে। পোনাদার গায়ে চর্বি নেই। চর্বি থেকেও লাভ নেই। মোটা মোটা গৌতম চন্দন কাকুর যদি ঠান্ডা লেগে গুটিয়ে গিয়ে থাকেন তো পোনাদার বাঁচার কোনও উপায় নেই। আরে ওটা কী? কাঞ্চনজঙ্ঘা। মনে হচ্ছে একদম সামনে। পোনাদা লাফ দিয়ে ধরবেন ই ধরবেন। সেতো পাশের বাড়ির ছাদে মনে হচ্ছে। সমু বললো ওটাতে কব্রু শৃংগই বেশি কাঞ্চন কমহলেইবা। এতো কাছে কাঞ্চন। পোনাদা আজকে তাকে ধরবেন ই ধরবেন। এতো দুধ সাদা আইসক্রীম কোনদিন খান নি। দলে 3-4 টে ছোটো বাচ্চা আছে। তারা চুপ। পোনাদা বাচ্চাম শুরু করলেন। একবার তো অজ্ঞান হয়েই যান। যাই হোক একটা ঘরে এবার চন্দনকাকুর সঙ্গে গৌতম আর পোনাদা। ওরা পরিখ্যা করে দেখছিলো। দুজনে শুলে পোনাদা শুতে পারবেন কিনা। দেখলো হাঁ পোনাদার পোনামাছের শরীর ঠিক ঢুকে যাবে।
এদিকে গোল বেধেছে বুড়োকাকুদের ঘরে। এই বুড়ো কাকু একটু বেশি বয়েস হলেও মোটেও বুড়ো নন। সর্বদা হাসিখুশি। খুব ভালো লোক। কম কথা বলেন। কিন্তু আজকে খেপে লাল। মোহন কাকুর সঙ্গে এক রুম এ তিনি। আর আসার থেকে বাথরূম মোহন কাকু দখল করে রেখেছেন। জল গরম হচ্ছে না। কিন্তু মোহন কাকু দখল ছাড়তে পারছেন না। কী বিপদ। এদিকে বেদম চাপ। অন্য ঘর গুলি হয় ওপরে নয় মহিলা প্রধান। ওপরে উঠতে গেলে সমস্যা। মোহন কাকু নির্ঘাত ওখানেই ঘর ভেবে নিয়েছেন। পোনাদা হটাত্‍ অফিস সামলানোর কথা মনে পরলো। সোজা বুড়ো কাকু দের ঘরে গিয়ে "মোহনবাবু, মোনাকাকিমার ব্যাগ কোথায়, বেরিয়ে এসে দেখান।" মোনা কাকিমার ব্যাগ সাময়িক হারালেও আসলে হারায় নি। কিন্তু মোনা কাকিমার নাম শুনে জলদি বেরিয়ে এলেন। সেই ফাঁকে বুড়োদা ঢুকে দরজা এঁটে দিলেন। তাত্ক্ষনিক সমস্যা মিটল।
পোনাদা মনে মনে ভাবলেন যাক একা তিনি কাকলীকে ভয় পান না।



ষষ্ঠ ভাগ

বুড়োদা অতিপ্রয়োজনীয় কাজ তো সারলেন। খাবেন কী? হোটেল মালিকের অনুমানই ছিলো না এরা কী পেটুক। ওই চন্দনকাকু সমু গৌতম পর্যন্ত খাবার আসতেই সব শেষ। অনেক কষ্ঠে পুঁটির মা, পুঁটি, মোনা কাকিমা, বাচ্চা মেয়েটা খাবার পেলেও পোনাদা বুড়োদা ভাগে কিচ্ছু নেই। আজকে একটু তাড়াতাড়িই খাবার দিয়েছিলো। কিন্তু এই রাবনএর বংশ কে খাবার দেবার অনুমান ওদের ছিলো না। আশায় মরে চাষা। পোনাদা বুড়োদা একসঙ্গে বসলেও হোটেল আর হরিমটর ছাড়া কিছু দিতে পারবে না। বাড়িতে কাকলী রেগে গেলেও মাঝে মধ্যে খাবার জোটে না। একান্ত খিদে পেলে পাড়ার হরুর দোকান থেকে মুড়ি চিবান। এখানে হরুর দোকান নেই। তবে মুড়ি বোধয় ব্যাগ এ আছে। অগত্যা উঠে এসে মুড়ি চিবতে লাগলেন। যারা খেতে পেয়েছে তাদের টাকে চুল নির্ঘাত কমে গেছে এত ঝাল। সব ফর্সা রা লাল হয়ে গেছে। কালোরা কী হয়েছে বুঝতে পারা গেলো না। তবে অদৃশ্য ধোয়া সবার টাক দিয়ে বেরচ্ছে। এর মধ্যে প্রথমে খাবেন না বলেও হটাত্‍ দুর্বল লাগায় মোহন কাকু টয়লেট অপপো সাময়িক বন্ধ রেখে খাবার ঘর মুখো হলেন। কিন্তু বিপদ। তার জন্য মুরগির ঝোল আর সামান্য ভাত ছাড়া কিছুই নেই। তাই তিনি টয়লেট কেই আবার আলিঙ্গন করলেন।
সন্ধা ঘনিয়ে আসতেই প্রথম বিপত্তি। পুঁটির মা ধপাস। শুকনো ডাঙ্গায় আছাড়। এরা এতো দুম দাম ধপাস কেনো হয় ভাবতে থাকলেন পোনাদা। পুঁটির মার লেগেছে। পোনাদা রাস্তায় গর্তে পরে গেলেও লোকে টেনে না তুলে হাসে। পোনাদার হাসি পেলো না। আহা লেগেছে বোধয়।
এদিকে শীতের থাবা বেড়েই চলেছে। পোনাদা বাঁচবেন বলে মনে হয় না। টেনিদার মতো পোনাদার ও কালাজ্বর এর পিলে হাতে বেরিয়ে আসার যোগাড়। এতো কষ্ট জানলে কাকলীর গরম আঁচল ছেড়ে এখানে কে আস্ত? যতই মুখ ঝামটা দিক।
রাতে প্রথম গর্জন। এবার চন্দনকাকু। মার মার মার বলে ঘুমের মোদ্ধে ঘুষি চালিয়ে দিয়েছেন। ঠান্ডা ও উচ্চতায় ঘুমেও সমস্যা হয়। তবে লোকে মারকুটে হয় এই প্রথম পোনাদা দেখলেন। ঘুষি গৌতম এর হাত ছুয়ে ঘুমন্ত পোনাদার পিঠে। "ও কাকলীগো আমি কোনও মহিলাকে দেখিনি গো। মরে যাব গো। আর মেরোনা। " পোনাদা উঠে বসলেন। গৌতম ও উঠে বসেছিলো। তবে সে দুটো নিশিধ্য ভাষা বলে শুয়ে পরলো। পোনাদা আঘাত কাটিয়ে উঠতে সময় নিলেন। শুলেও ঘুম আসছে না। একবার কাঞ্চন দেখলেন। কী রূপ কী রূপ। জোত্স্নার আলোয় ভেসে যাচ্ছে। অপরূপ সাদা। কোনও কুয়াশা নেই। তাই এতো ঠান্ডা।
"আমার সব উইল কাঠের আলমারির নিচে বক্সে আছে। কে হাত দেয় ওখানে ? কে? মার মার, তোদের বাবুদার দিব্যি, মার ,মার"। চন্দনকাকু আবার চেচিয়ে উঠলেন। ঘড়ি বলছে 5 টা বাজে প্রায়। এবার গৌতম পোনাদা জেগে যাওয়ায় আর কিল ঘুষি খেতে হল না। তবে এবার চন্দনকাকুর ঘুম একসঙ্গে বাকি দের নিয়ে জাগলো। গৌতম এর অভিজ্ঞতা আছে চন্দন কাকুর এই ধরনের আচরণের। বকখালি তে তো ঘুমের ঘোরে কাকে ফোনে রিং করে আসছি বলে বেরিয়ে পড়েছিলেন। দুম করে দরজা বন্ধ হওয়াটা গৌতম এর ঘুম ভেঙে ধরে ঘরে ঢুকিয়ে নিয়ে আসে। সে যাত্রায় হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান মানুষটি। আর ঘুম এলো না পোনা দার। চন্দন কাকুও উঠে বসেছেন। গৌতম নাক ডাকিয়ে ঘুমচ্ছে আবার। যেন সারা রাত নিশিপ্রহরা দিয়ে এসেছে। তেতো জলের মহিমা।
নতুন ভোর। আরও কাছে কাঞ্চন। কী সুন্দর। ময়ুরী যেনো পেখম মেলে সূর্যে স্নান করছে। আরও আরও সামনে। আরও বড়। "তবে দূর থেকে চাঁদ আর টেলিস্কোপ এ চাঁদ দেখার মধ্যে দূর থেকে দেখলে বেশি সুন্দর। কাছে গেলে কলঙ্ক দেখা যায়"। পোনাদা হটাত্‍ সাহিত্যিক চন্দনকাকুর গলা পেলেন। লোক টা একটু আধটু লেখে টেখে। কোন পেপার এ যেনো বেরিয়েও ছিলো। আর এই বুড়ো বয়েসে বুকে ব্যাথা নিয়ে ঠিক কাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মনে মনে নমস্কার জানালেন পোনা দা।
এদিকে গৌতম এর নাসিকা ক্ষণে ক্ষণে শব্দ পরিবর্তণ করছে ও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা রূপবান হচ্ছেন।






সপ্তম ভাগ

কাঞ্চনজঙ্ঘা রঙ পাল্টে পাল্টে গিরগিটি সম সং সাজছে। পোনাদা এসবে আর সেভাবে আকৃষ্ট হচ্ছেন না। কালকে বাড়ি ফিরবেন। অতিরিক্ত 5 হাজার টাকা এনেছিলেন। ইচ্ছা ছিলো সাড়ে চার নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু এই সমু গৌতম এদের পাল্লায় পরে সব গোল্লায় যাচ্ছে। এদিকে নিচে সেই বড় মোবাইল যেটা খাতার মতো দেখতে, যে মেয়েটা নিয়ে ঘোরে সে আসলে বুরদার ভাগ্নী। নাম টেপি। টেপি হটাত্‍ চেচাচ্ছে লোকের ভালো করতে নেই। করলেই বদনাম।
কলকাতার পুরোনো পাপীদের মতো উত্সুক পোনাদা এগিয়ে গেলেন শুনতে কী হয়েছে।
"আরে কালকে রাতে রুম হিটার নিয়ে আমরা ঠান্ডা লাগিয়ে মামা কে দিলাম আর মামা আজকে সকালে বলছে কেনো দিলাম, অন্যায় করেছি, লোকের ভালো করতে নেই"। গজ গজ করতে করতে টেপি বেরিয়ে গেলো। এক রাউন্ড লড়াই তে হেরে "মামা" চুপচাপ কাঞ্চন এ মনোনিবেশ করলেন।
যেখানে পাহাড় সেখানে আর কিছু থাকবে না তা হয় নাকি? পেলিং আরও সুন্দর। আরও ভয়ংকর। আজকে সকালে পাউরুটি সেদ্ধ দিয়েছিলো মাখন দিয়ে। সারা রাত বিদ্যুত্‍ ছিলো না। পোনাদা ভাবলেন যাক, এখানেও কারেন্ট যায়। কলকাতায় না হয় গরমে গড়ের মাঠে বিনা পয়সায় হওয়া খাওয়া যায়। এখানে কী হবে? গরম লাগলে? এত বিদ্যুত্‍ যাওয়ার জন্যই বোধয় কোনও ঘরে ফ্যান নেই। বিদ্যুত্‍ না থাকায় জলের অভাবে প্রাতকৃত্য যেমন অর্ধেক হয়েছে তেমন খাবার ও সেদ্ধ। কী ঝঞ্ঝাট। তবে এই সেদ্ধ খাবারের প্ল্যান আবার মোনা কাকিমা দেয় নি তো?
ভোরে একবার মোনা কাকিমার মেয়ে মোনা কাকিমা ও মোহন কাকুর আদ্যোপান্ত ঝেড়ে পরিষ্কার করেছে দূরভাষ এ । কোনও ভাবে সমুর মারফত মোনা কাকিমার মেয়ে ঘেনীর কানে উঠেছিল কটা ডিম একদিনে মোহন কাকু গলধগরণ করেছেন। এমনিতেই ঘেনী ভিশন রগচটা । মাথার ফিউজ ও একটু পাতলা। সেই সরু ফেউজে দিনে 4-5 টা ডিমের গল্পের তরঙ্গ একটু বেশি বিদ্যুত্‍ খেলিয়ে সট করে দিয়েছিলো। যা নয় তাই বলে মোহনকাকুকে বকেছে। সেই বকার গল্পে পোনাদা পর্যন্ত চমকে উঠেছেন। সমুর গুষ্টিও উদ্ধার করেছেন মনে মনে। ভাগ্যিস কাকলীর নাম্বার জানা নেই। নির্ঘাত তেতো জলের গল্প করা হয়ে যেত এতক্ষণ। সরদিন ই ছোকরা মোবাইল টিপে টিপে কী করে চলেছে
পাউরুটি সেদ্ধ আবার ডিম সহযোগে সবাই গিলে অর্ধেক প্রাতকৃত্য সম্পন্ন করেই গাড়ি ছুটে চলে। হরিমোহন অন্য হোটেলে ছিলো। এর থেকেও দামী এর থেকেও সুন্দর হোটেলে হরির বাবা আগে থেকে বুক করে রেখেছিল। ওকে ওর হোটেলের সামনে থেকে তুলে নেওয়া হলো। হরির বাবার এই ব্যবস্থা দেখে পোনাদার মনে পরলো। ওনার বাবাও এরকম ব্যবস্থা করে দাড়িয়ে ছিলেন দার্জিলিং মেল এর সামনে। না হোটেল নয়। ট্রেন এর একটা সীট বূক করে। মালদা পর্যন্ত। কারন তখন ফরাক্কা ব্রিজ সবে তৈরি হয়েছে। পোনাদা তখন সবে 10-12বাবা পাঠিয়েদিয়েছিলেন মালদায় শ্রমিকের কাজে। দার্জিলিং মেল পুরোনো ফরাক্কা অবধি যেতো। বাকি স্মৃতি ঝাপসা হয়ে এল। মনটা ভার হয়ে গেলো।
ও পোনাবাবু। নামুন। চন্দন কাকুর শব্দে নিজেকে সামলে নিলেন। কিন্তু নামতে গিয়ে বিপত্তি। চন্দন কাকুর দেহের ভার নিতে না পেরে মরমর শব্দে পেছনের পাদানি ভেঙে গেলো। চন্দনকাকু কোনও রকমে বেঁচে গেলেন। তবে পাদানিটা নির্ঘাত দু চারটে নিষিদ্ধ ভাষা প্রয়োগ করলো শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে। বাকিরা লাফিয়ে নামল। গাড়ির চালকের নিজের গাড়ি। সে মনে মনে কী বললো সেটা পোনাদা আন্দাজ করেছেন কিন্তু মুখে হাসি লেগেই রইল। "জাইয়ে আপ ফলস দেখিয়ে হাম দেখতে হায়"।
সামনেই একটা সরু ঝর্ণা। তবে সুন্দর। সব ক্যামেরা বার করে খুচ খাচ ছবি তুলতেই লেগেছে। হরি আবার বিপত্তি ঘটলো। এই দলের পতন ধারা অব্যহত রেখে অন্যদলের একঝাক সুন্দরি মহিলার সামনেই আছাড় খেলো। যন্ত্রনা যে হয় নি তা নয় তবে লজ্জা বেশি পেয়েছে সুদর্শন হরি।
আবার গাড়ি চলতে থাকলো। কিন্তু কয়েকটি ঘটনার জন্য গাড়ির কাঁচ বন্ধ করা যাচ্ছিল না। ভেতরে যারা সেদ্ধ পাউরুটি বেশি খেয়েছেন তারাই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন বেশি। তবে বেশিখন এই পরিবেশ এ থাকতে হয় নি। "উইশ লেক" বা "খেছিপেরি হ্রদ" এর একটু দূরে গাড়ি দাঁড়াল।
সমু বলে দিয়েছে। যা মনে আসবে চেয়ে নেবেন পোনাদা। একবার ই সুযোগ পাবেন।
হাটতে কষ্ট হলো না। হ্রদের সামনে দাঁড়িয়ে পোনা দা যা চাইলেন:
"হ্রদ বাবা ও যদি মা হয়ে থাকো তো মা, অনেক কষ্টে তোমার এখানে এসেছি। কাকলীর হাতে যেনো মার না খেতে হয় জীবনে সেই আসায় তোমায় অনুরোধ করে রাখলাম। "
এদিকে টেপি পুটির মা আর মোনা কাকিমা ঢং করে করে ছবি তুলছে। পোনাদা একবার ঢং করতে গেলেন। সমু ছবি তুলবে বলে কী করলো কে জানে, হয়ে গেছে হয়ে গেছে বলে সরিয়ে দিলো। পরে অবশ্য দেখেছেন, সমু দারুন ছবি তুলেছিল তার। সেটা বাধাই করে রাখবেন।
আবার গাড়ি চললো। এবার গন্তব্য কাঞ্চনজঙ্ঘা নামেই একটা ঝর্ণা। অপূর্ব নাকি। এদিকে গাড়িতে পরিবর্তণ হয়েছে। পেট খারাপ এর জন্য মোহন কাকু কোনও একটি গাড়ির সামনের সিট বাগাতে চেয়েছিলেন। কোনও পুটি নেরু কারোর মা ই তাদের চাইল্ড পাস দিয়ে যোগাড় করা সামনের সীট ছাড়তে চায় নি। ফলে একটু প্রোমোশন হয়ে পোনাদার গাড়ির মাঝের সিট এ বসেছেন। সামনে নেরুর মা আর নেরু। আর গাড়ির পাদানি আবার অদ্ভুত ভাবে ঠিক হয়ে গেছে। তবে চন্দন কাকুকে প্রোমোশন দিয়ে অন্য গাড়ির মাঝের সিট এ সাময়িক ভাবে পাঠানো হয়েছে।

 
অষ্টম ভাগ
-----------------------
গাড়ি চলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা ঝর্ণার দিকে, সামনের দিকে ড্রাইভার সাহেবের পাশে নেরু ও তার মা বুচি বৌদি। নেরু খুব ভালো স্বভাবের মেয়ে, পুটির মত। বাবাসোহাগী। বাবা এটা করব ওটা করব এই সব। ওর বাবা কেলু দত্ত। নামকরা বেচু। পোনাদা অনেকদিন এক ডক্টর এর কাছে কমপাউণ্ডার এর কাজ করেছেন। তাই জানেন এই বেচুশ্রেণী বড় ভয়ংকর। লেবু কে কলা বলে আরামসে বিক্রি করে দিতে পারে। তবে কেলুদা বা কালেশ্বর দত্ত খুব শান্ত স্বভাবের। বউ অন্ত প্রান। নাম বুচি হলেও বৌদি অবশ্য বেচু নন। আর্মি স্কুল এ পড়ান। তবে বেচু বুচি খুব কাছা কাছি শব্দ বলে দুজনের এত ভাব কিনা কে বলবে। গাড়িতে নেরুদের সাথে তাই কেলুদা কেও বসতে হবেই। বউ মেয়ে ছাড়া এক পা এগবেন না।


এত্ত বড় গ্রুপ এদের। নাম মনে রাখা মুশকিল পোনাদার। বুড়োদা, সমু, গৌতম, হরি, চন্দনকাকু টেপি ,পুটির মা ,মোহনকাকু ও মোনা কাকিমা ,নেরুর পরিবার রহিম পেরিয়ে আর নাম মনে রাখা মুশকিল। তবে আর এক মোটা সঞ্জয়, রহিম এর দাদা ও তার পরিবার, রহিমের প্রচণ্ড ভীতু শ্যালক গনাই আর সুফি গায়ক আনার পর্যন্ত মনে আছে। এই গনাইকে রহিম সহকারী হিসেবে এনেছে। এদিকে সেই অসুস্থ হয়ে একসা। ঠান্ডায় কাবু হওয়া তালিকায় সর্বশেষ নাম পোনাদার বলেই ভেবেছিলেন। কিন্তু না। ওটা গনাই।


কাঞ্চনজঙ্ঘা ঝর্ণার মুখে এসে গাড়ি থেমে গেলো। আগের সব ঝর্ণা থেকে বেশি জল পরছে সামনেই। তবে এটা নাকি আসল নয়। আসল আরও ভেতরে। পোনাদা ভয়ে গুটিয়ে গেলেন।
সামনে কতগুলো বড়লোকের ব্যাটা দড়ি ধরে ঝুলো ঝুলি করছে। পরে গেলে মা বাবা বলার সময় পাবে না। দড়ি ধরে ঝুলে ঝর্ণার মাঝে আসছে আর ঢং দেখিয়ে ছবি তুলছে। গৌতম জোর করতেই পোনাদা কে ভেতরে যেতে হলো। 20 টাকা গচ্চা দিয়ে টিকিট কেটে। ভেতরে আরও ভয়ানক। যেনো টালা ট্যাঙ্কএর সব জল কেউ একসঙ্গে ছেড়ে দিয়েছে। সজোরে এসে ওপর থেকে আছড়ে পরেই নিচে নেমে যাচ্ছে। আরও একটু সামনে হরি গেলেও পোনাদা সমু এরা দুরেই দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন। ঝর্ণা বটে এটা। ভুঁড়ি সামলাতে না পারায় ও দুর্বল থাকায় চন্দন দা ও মোহন কাকু জুটি বাইরেই থেকে গেলেন। একবার করে ধপাস হওয়া পুটির মা আর হরি কিন্তু অনেকটাই এগিয়ে গেছে।


টেপির খাতা বন্ধ। বিদ্যুত্‍ না থাকায় মোবাইল আপাতত ঘুমন্ত। তবে ছোট আর একটি মোবাইল থেকে ছবি তোলার বিরাম নেই। মোবাইল এর দোকান আছে নাকি রে বাবা। পোনাদার কাছে সাদাকালো পুরোনো মোবাইল কিন্তু এখনো দিব্যি চলছে।


সবাই মোমো খেলো। পোনাদা অনেক খরচ করে ফেলেছেন। তাই হোটেলেই খাবেন। গাড়ি হোটেল মুখী। সবাই যে যখন পারছে গিলছে। কিন্তু দুপুরের খাবার একটু দেরি হলেই ঝাপিয়ে পরছে। পোনাদা ব্যাতিক্রম। তবে আজকে রাবণের গুষ্টির জন্য যথেষ্ট রান্না হয়েছে। একপিশ মাছ জুটেছে। তবে ঝাল টা সেরকম কমে নি। ঝাল খেতে ওস্তাদ বুচি বৌদিও কেঁদে কেটে একসা। বুচি বৌদি কেঁদে চলেছেন আর কেলুদা রুমাল দিয়ে মুছে চলেছেন। নেরু ঠিক আছে।
খাওয়া শেষ। বিলাতী ব্যবস্থা শুরু। তবে বিকেলে একটা বৌদ্ধ মন্দির ও হেলিকপ্টার নামার যায়গায় যেতে গাড়ি আবার ছুটল।


অপূর্ব সুন্দর মন্দির। শেষ বিকেলের সূর্যে কাঞ্চন পরিবার আরও রূপবান। তবে বেশিখন নয়। কারন হেলিপ্যাড এ যেতে হবে। এমনিতেই মোটা লোকগুলোর বার বার জুতো খুলতে আর পরতে দম বেরিয়ে যাচ্ছে। পোনাদা রোগা হওয়ায় সেদিকে সুবিধে। হেলিপ্যাড কাছেই। দেখে বেরিয়ে এলেন সবাই। রাতে মুরগি কসা হচ্ছে তো। বাইরে আগুন জেলে। রহিম গৌতম কেউ আর পয়সা চায় নি। তাই পোনাদা ঠিক করলেন সব থেকে বড় পিস তিনিই হাতাবেন। তবে সেটা ও চন্দনকাকু মোহনকাকুর বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হলে তবেই। আগের দিন ভয়ংকর অন্ধকার থাকায় আজকেই মুরগি ঝলসানো হবে।







নবম ও শেষ ভাগ:

মুরগি ঝলসানোয় দেখা গেলো চন্দনকাকু এক নম্বরসঙ্গে রহিমের দাদাদুটো গোটা মুরগি কোথায় উড়ে গেলো কেউ বুঝতেই পারলো না। পোনাদা ভেবেছিলেন বড় পিসটাই গিলবেনপারলেন নামোহনকাকু ঘেনীর হুমকি উপেখ্যা করেই সেটি তুলে নিলেনএবং খতম ও করে দিলেনতবে পেট পুড়ে খেলেন সবাইসঙ্গে চললো গানআনোয়ার ভালো গান করলোসবাই জানতোই নামোনাকাকিমা চেপে ধরতেই গাইলপোনাদা কে সবাই চেপে ধরলপোনাদা কিশোর কুমার এর “মেরি স্বপ্ন কী রানী” ধরতেই গলায় কেউ যেন বরফ বুলিয়ে গেলোকী বিপদশুধুই চি চি করে কিছু শব্দ ছাড়া কিছু বেরলো নাসবাই হো হো করে হেঁসে উঠলেনগৌতমটা এত ফিচেল জানা ছিলো নাহটাত্‍ বলে “এরকম গান তো আপনি ফুলশয্যার রাতে ভয়ে ভয়ে করেছিলেনএখানে কিসের ভয়”খুব লজ্জা পেলেন পোনাদাতবে কী এরা জেনে ফেলেছে যে তিনি কাকলীকে কত্ত ভয় করেনতাও লজ্জা চেপে “না না এই দেখ ঠিক ঠাক করছি”বলেই যে স্বরে গান ধরলেন তাতে আর যাই হোক আসে পাশের জঙ্গলে জন্তুদের ঘুম ঠিক ভেঙে গেলোসবাই থাক থাক বলে থামিয়ে দিলোপুঁটির মা আজকে খুব সাবধানে ঘুরছেএখানেই পতন ঘটেছিলোটেপি তার মোবাইল ফ্যাক্টরি থেকে ছবি তুলেই চলেছেহরিমোহন এই আনন্দ মিস করলোতবে এই হাড় কাপন ঠান্ডা তাকে স্পর্শ করছে নাএটাই সুখ
রাতে জলদি জলদি শুয়ে পরলো সবাই। সবাই একে অন্যকে ছেড়ে যেতে হবে বলে দুখীতবে পোনাদা সব থেকে বেশিকারণ পরশু আবার সেই কাকলীগৌতম এর মেয়ে আছেও মেয়ে বউকে নিয়ে আসবে বলে ঠিক করেও শেষে কী একটা কারনে তাঁরা আসেন নিতাই মাঝে মধ্যেই গৌতম ফোনে যোগাযোগ করে বাড়িতেসব থেকে বিরক্ত লাগে সবাই ঘুমিয়ে পরলে তখন গুজ গুজ করে কথা বলেপেশায় সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়াতে এর রাতে ঘুম নেই আর যত ঘুম ভোরে নাকডেকে সবাইকে ঝামেলা করেপাশে আজকেও পোনাদা। তবে আজকে রাতে চন্দনকাকু জলাননিশুয়েছেন আর ঘুমিয়েছেনচিত্কার করেন নিঘুষিও মারেন নি, তবে নাসিকা গর্জন করে সবাই কে বেস কিছুখন জাগিয়ে রেখেছেনভালো ছেলের মত পোনাদাও ক্ষণিক বাদে ঘুমের দেশে
সকালে যথারীতি কাঞ্চন রূপের ডালি নিয়ে হাজির। ঘেনীর ফোন আজকে আবার মোহনকাকুকে বকেছেতবে বেশি নয়উঠে আজকে প্রাতকৃত্য করতে পেরেছেন সবাইতাই গাড়িতে আজকে নির্ঘাত দুর্ঘটনা ঘটবে না
এরা সব একে অন্যকে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো কালকে থেকে আর কেউ কাউকে দেখবে না। ইতিমধ্যে পুরী ভুটান ইত্যাদি স্থানের পরিকল্পনা শুরু করে ফেলেছেন এরা। রাবণের গুষ্ঠী তো বটেই পাগল ও বটে। মনে মনে ভাবলেন পোনাদা।  
9:30 এর মধ্যে গাড়ি ছেড়ে দিলো। নিশানা নিউ জলপাইগুড়িপোনাদাও এদের সঙ্গে বাড়ি ফিরবেনটিকিট গৌতম এর কাছেপথে জরথাং এ গাড়ি দাঁড়ালসবাই কেনা কাটায় মত্তপোনাদা যা থাকে কপালে বলেই দুটো কম্বল আর একটা ছেলের সোয়েটার কিনলেনব্যাগ এ আর হাজার তিনেকেএদিকে আজকে কাকলী অন্তত 3500 তাকে গিয়ে ফেরত দেবার হুমকি দিয়ে রেখেছেযা হয় হবে দেখা যাবে
রাস্তায় একবার পোনাদা ভয় পেয়েছিলেন। ডিনামাইট ফাটার শব্দে ভেবেছিলেন নির্ঘাত ঘাড়ে এসে পাহাড় পরেছেতবে চোখ বুজে কাকলীকে ডাকা ছাড়া আর বিপত্তি ঘটান নিচাইল্ড পাস ছেড়ে নেরু ও বুচি বৌদি মাঝের সিট এসামনের সিট এ মোহনকাকু বাড়ি থেকে আনা মদনমোহন একাই সাবাড় করছেনএমনকি হ্যাংলা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা চন্দনকাকু বা গৌতম কাউকে দিচ্ছেন না
এই সব আজব কারবার করতে করতে সবাই সন্ধে বেলা নিউজলপাইগুড়ি পৌছলেন। টেপির তুতো বোন কোথেকে যোগাড় হয়ে গেলেনসুবেশা তরুণী সবার সাথে ভাব জমালেনসঙ্গে নিয়ে এলেন খাসির মোমোসবাই চেটেপুটে খেয়ে স্টেশন এর দিকে চললেনকিন্তু ট্রেন এ উঠে হটাত্‍ পোনাদার খেয়াল হলো তিনি খাবার আনেন নিসঙ্গে সামান্যই মুড়িএদিকে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছেসেভাবে কিছু উঠছেও নাচন্দন কাকু সংগের রুটি থেকে এক টুকরো দিলেন
রাতে প্রকৃতির টানে টয়লেট যেতেই পুলিশ ধরেছে পোনাদা কে। এত রাতে কী করছেনযতই বলেন তিনি বাড়ি ফিরছেনপুলিশ ভাবছে উগ্রপন্তি বা নিদেন পখ্যে চোরপোনাদা কে নিয়ে দলবল গৌতম এর কাছে এলো। গৌতম তো ওঠেই নাসারা পৃথিবীর ঘুম তার চোখেপুলিশ ও ছাড়বে নাশেষে অনেক কষ্ঠে ঘুম ভেঙে আইকার্ড দেখিয়ে টিকিট দেখিয়ে তবে মুক্তিআর একটু হলেই হয় ছবি নয় খবর, কিছু একটা হচ্ছিলেনবাকি রাত আর টয়লেট মুখো হন নি
ভোরে সবাই নেমেই চললেন যে যার বাড়ি। কাকলী বেজার মুখে দরজা খুলেই আগে গুণে গুণে টাকা নিলেনতবে দুটি কম্বল ও সোয়েটার এর গুণে কাকলী কিছু বললো নাশুধু শুনিয়ে রাখলেন, “সামনের গরমে ছেলের ছুটিতে ভুটান যাবভুল হয় না যেনো”পোনাদার মাথায় হাতআবার খরচ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন