Amazon

শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৯

মে'র পাহাড় মেঘের বাহার -------------------- [পর্ব 2]


সকাল সকাল উঠে সূর্যোদয় দেখেই বেড়িয়ে পড়া।


 সেই মত সকাল ৭ টায় গাড়ি নিয়ে হাজির বিকাশ। আমাদের আগের দিনের সারথি। আগের দিন ও নিয়েছে ৩৫০০ টাকা, আজকে নেবে ৮০০। পৌঁছে দেবে মানেভঞ্জন। প্রাতরাশে রুটি আর তরকারি করেছিলো। মোটের ওপরে প্রেম্বা দুপকার মা রান্না খারাপ করেন নি। সেটা খেয়েই বেড়িয়ে পড়া। এখানে বলে রাখি প্রেম্বা দুর্গাপুরে পড়াশোনা করে। কোলকাতায় আসে। ওকে ফোন করে বুকিং করা যায়। ও বাড়িতে বলে রাখে। তবে একটু আগে সব কিছু বলে রাখা ভালো। কারন এখানে মোবাইল টাওয়ার প্রায় নেই বললেই চলে। সম্ভবত নেপাল-ভারত সীমান্ত হওয়ায় মোবাইল কোম্পানি গুলি গুলিয়ে ফেলেছে।
গাড়ি চালু হতে পাহাড়ের পাকদণ্ডি বেয়ে অনেকখানি নেমে আসা। কারন মানেভঞ্জন অনেক নীচে। প্রায় ৪৫ মিনিট পাহাড়ি পথ অতিক্রান্ত হলে এলো মানেভঞ্জন। ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ। তবে প্রায় সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। হোটেল আছে। যারা হেঁটে উঠতে চান এখানেই থাকেন। সকাল সকাল হাঁটা শুরু করেন। এখানে গাড়ি পরিবর্তন করতে হবে। ল্যান্ড রোভার অ্যাসসিয়েশন থেকে ভাড়া নিতে হবে ল্যান্ড রোভার বা বোলের। সকাল ৮ টার কিছু আগেই পৌঁছে গেছি। কিন্তু বুকিং শুরু হতে এখনো প্রায় এক ঘন্টা বাকি। এই ফাঁকে আমার হাতে ঢুকে গেলো টেডব্যাগ ইঞ্জেকশান। আগের দিনের কেটে যাওয়ার ফল স্বরুপ। বুকিং শুরু হতেই ওদের অনুরোধ করা হল যাতে আমাদের একটি বোলের দেয়। ল্যান্ড রোভার উচ্চতায় টান দিতে ওস্তাদ। কিন্তু আমার রোগা শরীর ও প্রচুর ব্যাগপত্র দেখিয়ে একটু বড় বোলের নেওয়া হল। ৪এক্স৪ বোলের। সাধারণ গাড়ির থেকে অনেকটা বেশী ক্ষমতা সম্পন্ন। একরাত থাকা, যাওয়া আসা নিয়ে দাম নিল ৫৫০০। তবে কিছু ব্যাগ বেশী ভারি হওয়ায় রেখে যেতে হয়েছে অফিসে। এক অনুরোধে রাখতে দিয়ে দিলো। সুন্দর ব্যাবহার। গাড়ি ছাড়তেই নজরে এলো শিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যান। ঢোকার মুখে জনপ্রতি ৮০ টাকা করে টিকিট কেটে, গাড়ির জন্য ৮০ টাকা দিয়ে, ক্যামেরা (স্থির চিত্র) প্রতি ১০০ টাকা ও ভিডিও ক্যমেরা ৪০০ টাকা প্রতি ক্যমেরা দিয়ে তবেই ঢোকার অনুমতি মিলবে। এই রেট ভারতীয়দের জন্য। এই রাস্থা দিয়েই হেঁটে যেতে হয়। তবে হেঁটে গেলে সঙ্গে গাইড বাধ্যতামুলুক। গাড়ি উঠতে শুরু করলো।
গাড়ি উঠছে না উড়ছে? প্রায় ৪৫-৬০ ডিগ্রী এক একটি খাঁড়াই। কিন্তু রাস্থা পাকা ও ঝকঝকে। বুঝতে পারছি কেন গাড়িগুলি বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন। এই ভাবেই একে একে টুম্লিং, চিত্রে ইত্যাদি পেরিয়ে প্রথম থামা প্রায় ২ ঘন্টা পরে গইরাবাসে। এই রাস্থা অদ্ভুত সুন্দর। বাঁকে বাঁকে সৌন্দর্য। তেমন ভয়ংকর খাঁড়াই। একটা ভয়ংকর সুন্দর অভিজ্ঞতা।
গইরাবাসে একটু চা মোমো খেয়ে শুরু হল সংগ্রাম। সঙ্গে ঢেকে আসা মেঘ। সামান্য এক হাত দূরের রাস্থা দেখা যাচ্ছে না। আবার মেঘ কেটে গেলেই বেড়িয়ে আসছে সুন্দর রডডেন্ড্রন পাহাড় জুড়ে। না কাঞ্চন বাবুর দেখা নেই। আর রাস্থা? সে না বলাই ভালো। আসলে এখানে আদপেই কোন রাস্থা নেই। এই ভাবেই কালিপখরি পৌঁছে দেখলাম ছোট্ট সুন্দর জলাশয়। খুব বেশী কিছু দেখা গেলো না মেঘের জন্য। এর পর প্রায় প্রান হাতে নিয়ে, গাড়ি স্কিড করিয়ে সান্দাকফু পৌছতে আরও এক ঘন্টা। এই শেষ এক ঘন্টা যেন প্রান হাতে নিয়ে বসে থাকা। হয়ত মেঘ না থাকলে প্রাকৃতিক দৃশ্য মন মাতাতো। কিন্তু আজকে সম্ভব নয়। এই ভাবেই প্রায় ১২০০০ ফুটে পৌঁছে গেলাম সান্দাখফু। হোটেল সানরাইস। আবার কালকে। সঙ্গে থাকুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন