Amazon

শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৯

মে'র পাহাড় মেঘের বাহার Part- 1




পর্ব ১

একটা ছোট দল, ৬ জন, এর বেশী লোক নিয়েই পাহাড়ে যেতে অভ্যস্ত সুগত বসুর এটা প্ল্যান্ড ট্যুর ছিল না। কারন এই ট্যুর নভেম্বরে তৈরি করা ছিল। 

হটাত আমার কাজের খানিকটা অবকাশ মিলতেই মাস খানেক আগে আমি ধরলাম চলুন কোথাও যাই। কল্যাণী বৌদি এই সময় খুবই ব্যস্থ থাকে। কিন্তু আমার অনুরোধ ফেলতে পারলো না। রাজি হয়ে গেলো । ফলে এক পা এগিয়ে থাকা সুগত দা চটপট নভেম্বরের ট্যুর এখনি করতে তৈরি হয়ে গেলেন। প্ল্যান করাই ছিল, জোরেপোখরি, সান্দাখফু, লেপচাজগত, লাটপাঞ্চার হয়ে শেষ পাতে মহানন্দা বনপ্রান বীক্ষণ শেষ করে ফিরব। এত দেরি করে প্ল্যান করলে যা হয়, টিকিট দুজনের অপেক্ষমান। বাকিদের কোটায় উঠলেও আমার টিকিট শেষ পর্যন্ত অনেক ঝামেলা করে একটা সাইড লোয়ার, তাও স্লিপারে। অর্থাৎ গরমে ঘামতে ঘামতে ট্রেনে ওঠা। তবে জানলার ধারে হওয়াতে রাতে ঘুমের অভাব হয় নি। ভোট দিয়েই ব্যাগ পত্র নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। রাতের কষ্ট অতটা না হলেও এন যে পি তে নামার পরেই ভয়ানক গরম বলে দিলো যাও কয়েকদিন ঘুরে এসো। রাতে ট্রেনে আনন্দদা (ঘোষ হাজরা) চিকেন রোল এনেছিলেন। কিছুই খাবার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু জোর করায় খেয়ে নিলাম। কল্যাণী বৌদি দারুন পনিরের তরকারি এনেছিল। কিন্তু গরমে পেট ঠিক থাকবে কিনা ভেবে খেলাম না। লেপচা জগতের রবিন তামাঙ্গের ব্যাবস্থা করা গাড়ি (সুমো গোল্ড) তৈরি ছিল স্টেশনের ঠিক বাইরেই। আমরা বেড়িয়ে তাতে উঠে রওনা দিলাম জোরপোখরির দিকে। জোরপোখরি দুই ভাবেই যাওয়া যায়। মিরিক হয়ে বা ঘুম হয়ে। মিরিক হয়ে গেলে পথে কার্শিয়ং পড়বে না। আমরা ওই দিক দিয়েই এগলাম। ভাড়া এদিক দিয়ে গেলে বেশী। আপনি নেমে দেখে নিতে পারবেন মিরিক লেক। অনেকবার এই রাস্থায় আসার সুবাদে জানি যে এই রাস্থায় প্রচুর কমলালেবু চাষ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এখন সময় নয়। আমরা এগিয়ে চললাম। পথে সুখনার আগেই আমাদের জল খাবার খাওয়া হয়ে গেছে। এর মাঝে এসেছে সীমানা, পশুপতি গেট প্রভৃতি নেপাল যাওয়ার বা নেপালের সঙ্গে লেপ্টে থাকা সীমানার অংশ গুলি। এখানে কাঁটাতার নেই। তাই বর্ডার পিলার দেখেই বুঝে নিতে হবে কখন ভারতে কখন নেপালে। কিন্তু মিরিক পেরতেই বউদির শরীর খারাপ লাগায় আমরা গোপালধারা চা বাগানে দাঁড়ালাম না। এই চা বাগানের অতুলনীয় সৌন্দর্য একবার আমার মন কেরেছিল। এই বাগানে চা গাছের মধ্যে দিয়ে হেটে যাওয়া যায়। এবার নামলাম না। আরও ঘন্টা খানেক বাদে এসে পৌঁছলাম জোরপোখরি। বেশ খানিকটা উঁচুতে। উচ্চতা প্রায় ৭০০০ ফুটের একটু বেশী। এখানে জি টি এ নিয়ন্ত্রিত একটা সুন্দর বাংলো আছে। কলকাতার সল্টলেক গোর্খা ভবন থেকে বুকিং হয়। কিন্তু আমাদের ভাগ্যে জোটে নি। ফলে পাশেই একটা একদম নতুন হোমস্টে তে থাকার বন্দবস্ত করেছিলো সুগতদা। সেখানেই মালপত্র রেখে বাইরেটা দেখতে বেরলাম। বাইরে ঠাণ্ডা ভালই। কিন্তু হটাত হটাত মেঘে সব ঢেকে দিচ্ছে। এক হাত দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না। একটা বড় লেক আছে। তাতে কালিয়া দমনের সাপের ফনা। আর আছে বাহারি ফুলের মেলা। খানিকবাদে দর্শকদের মনরঞ্জনে ছেড়ে দেওয়া হল বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস। আজ মেঘে ঢেকে আছেন কাঞ্চনজঙ্ঘা। নাহলে আগের ছবি অনুসারে এই লেকের সামনে হাঁসের সারির সঙ্গে সঙ্গে শান্ত স্নিগ্ধ কাঞ্চন একটা অপরুপ মায়া সৃষ্টি করে। কিন্তু আমার বিধি বাম। আমার পায়ে লেগে গেলো লোহার আঁচড়। উঠে থাকা খোঁচার মত একটূকরো লোহার রডে আমার পা কেটে রক্তারক্তি। সেরকম জ্বালা নেই কিন্তু টেডব্যাগ ইঞ্জেকশনের যন্ত্রণা সহ্য করার প্রতিশ্রুতি নিয়েই বাকি দিনটা মেঘ দেখে আর ঘিরে থাকা উঁচু উঁচু গাছের সাড়ি দেখেই কাটিয়ে দিলাম। খাবার সকালে নিরমিশ দিলো। রাতে চিকেন। খুব একটা সেদ্ধ নয়। তবে খেতেও খারাপ লাগে নি। জনপ্রতি ১০০০ টাকা। দাম বেড়ে গেছে। রাতের দিকে জমিয়ে পড়বে ঠাণ্ডা। তবে বৃষ্টিও হল। যা কিনা পরের দিনের সূর্যোদয় আমাদের দেখিয়ে দিলো। কিন্তু কাঞ্চন এলেন না। ২২ তারিখ যাবো সান্দখফু। সে লেখা নিয়ে আসছি পরের পর্বে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন